অতীতের ভুলে ঘুমাতে পারছেন না? ভগবদ্গীতার ৭টি গাইডলাইন

তরুণ বন্ধুরা, “অতীতের ভুল” এই দুটি শব্দ কি আপনার চিন্তার ঘরে ঘুরপাক খায়? হয়তো একবার পরীক্ষায় ভালো করতে পারেননি, হয়তো কোনো বন্ধুর সাথে ঝগড়া হয়েছে, বা হয়তো এমন কিছু বলেছেন যেটা আজ আপনার অনুশোচনার কারণ। ঘুমের সময় মাথায় আসে হাজারো চিন্তা, এবং সেই চিন্তাগুলো যেন ঘুমের পেয়ালায় নোনা স্বাদ দেয়।

কিন্তু বন্ধু, চিন্তা করবেন না! ভগবদ্গীতার অমৃতসম শিক্ষা আমাদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে। চলুন, গীতার ৭টি গাইডলাইন দেখে নেওয়া যাক যা অতীতের ভুলকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগোতে আপনাকে সাহায্য করবে।

১. কর্মে ফোকাস করুন, ফলে নয় (কর্মণ্যেবাধিকারস্তে)

গীতায় কৃষ্ণ বলেছেন: “তোমার অধিকার শুধু তোমার কর্মে, ফলে নয়।” অতীতে কী ভুল হয়েছে সেটা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করার চেয়ে বর্তমানের কাজের উপর মনোযোগ দিন।

উদাহরণ:

আপনার একবারের পরীক্ষায় খারাপ ফল হয়েছে? চিন্তা করবেন না। আগামী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিতে মন দিন। আপনার চেষ্টাই আপনার ফলের সেরা ভিত্তি।

২. আত্মনিয়ন্ত্রণ শিখুন (যোগ স্থিতি উচ্যতে)

যোগ মানে শুধু আসন নয়, এটা হল মনকে স্থির রাখা। অতীতের ভুল যদি আপনার মনকে অশান্ত করে তোলে, তাহলে ধ্যানের মাধ্যমে সেই অস্থিরতা কাটিয়ে উঠুন।

কৌশল:

  • প্রতিদিন ১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে ধ্যান করুন।
  • আপনার শ্বাসের উপর মন দিন।
  • “ওম” শব্দটি মনে মনে উচ্চারণ করুন।

৩. সমতা বজায় রাখুন (সমত্বং যোগ উচ্যতে)

ভালো বা মন্দ, জীবনে সবকিছুকে একইভাবে গ্রহণ করতে হবে। অতীতে খারাপ কিছু ঘটলে, সেটা মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করতে দেবেন না। কৃষ্ণ আমাদের শিক্ষা দেন যে জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতা থেকে কিছু না কিছু শেখার থাকে।

উদাহরণ:

আপনার প্রিয় বন্ধু যদি আপনাকে আঘাত দিয়ে থাকে, তাহলে মনের ভারসাম্য বজায় রেখে তাকে ক্ষমা করতে চেষ্টা করুন। এতে আপনার মনের শান্তি বজায় থাকবে।

৪. নিজের দায়িত্ব পালন করুন (স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়)

গীতায় বলা হয়েছে, নিজের কাজ ঠিকভাবে করা সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। অন্যের সাথে তুলনা করা বা তাদের কাজ নিয়ে চিন্তা করার কোনো দরকার নেই। নিজের পথে এগিয়ে যান।

বাস্তব প্রয়োগ:

যদি আপনি কোনো কাজ শুরু করেন এবং তাতে ভুল হয়ে যায়, নিজের দায়িত্বের প্রতি সৎ থাকুন। নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান।

৫. অতীতের উপর নির্ভর করবেন না (অদ্বৈতভাব)

ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অতীতের বোঝা ঝেড়ে ফেলুন। কৃষ্ণ বলেন, “আমরা আমাদের মন দিয়ে যা ভাবি, আমরা তাই হয়ে যাই।” অতীত নিয়ে ভাবতে থাকলে, সেটাই আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করবে।

করণীয়:

  • একটি ডায়েরিতে আপনার ভুল লিখুন এবং ভুল থেকে কী শিখলেন, সেটাও লিখুন। এরপর ডায়েরি বন্ধ করে সামনের পরিকল্পনায় মন দিন।

৬. আত্মবিশ্বাস রাখুন (আত্মানং বিদ্ধি)

গীতার অন্যতম মূল শিক্ষা হল নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা। কৃষ্ণ বারবার অর্জুনকে বলেছেন, “তুমি যদি নিজের ক্ষমতা বিশ্বাস কর, তুমি সবকিছু অর্জন করতে পার।”

উদাহরণ:

আপনার যদি মনে হয় আপনি একবার ব্যর্থ হয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও হবে, তাহলে সেই চিন্তাকে গীতার এই বাণী দিয়ে সরিয়ে দিন। নিজেকে বলুন, “আমি পারব।”

৭. ক্ষমা ও মুক্তি (অহিংসা পরম ধর্ম)

অতীতের ভুলের জন্য নিজেকে বা অন্যকে ক্ষমা করুন। এই ক্ষমা আপনার মনের ভার কমিয়ে দেবে। ক্ষমার মধ্যে এক অভূতপূর্ব শক্তি আছে যা মানুষকে হালকা করে তোলে।

বাস্তব উদাহরণ:

আপনার যদি কোনো বন্ধুর সাথে সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে একবার ফোন করে তার সাথে কথা বলুন। তাকে ক্ষমা করুন এবং নিজেকেও মুক্ত করুন।

গীতার মূলমন্ত্র: জীবন এগিয়ে চলার নাম

বন্ধুরা, অতীতের ভুলকে মনে করে বারবার দুঃখ পাওয়া মানে নিজের প্রতি অন্যায় করা। ভগবদ্গীতার এই ৭টি গাইডলাইন আপনাকে সেই দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, জীবন হচ্ছে শেখা, ভুল করা এবং আবার চেষ্টা করার নাম।

অ্যাকশন স্টেপ:

  1. প্রতিদিন সকালে ৫ মিনিট গীতার একটি শ্লোক পড়ুন।
  2. ধ্যানের সময় অতীতের ভুল মেনে নিয়ে নিজেকে ক্ষমা করুন।
  3. নতুন দিনের জন্য একটি পজিটিভ পরিকল্পনা তৈরি করুন।

শুভ কামনা, এবং মনে রাখুন , আপনি জীবনের নায়ক। অতীত আপনাকে আটকে রাখতে পারবে না, যদি আপনি নিজে তা না চান।

হরেকৃষ্ণ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top