অতীত ভুলে ভবিষ্যতের পথে হাঁটার জন্য ভগবদ্গীতার ৭টি টিপস

আমরা সবাই জীবনে কখনো না কখনো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, যেখানে অতীতের ভুল আমাদের পিছু টানে। কখনো সম্পর্কের ব্যর্থতা, কখনো পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল, আবার কখনো নিজের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য অনুশোচনা। কিন্তু কীভাবে এই অনুশোচনার বেড়াজাল কাটিয়ে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাব? ঠিক এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমরা ভগবদ্গীতার দিকে তাকাতে পারি। চলুন দেখি, গীতা আমাদের কী শেখায়!

১. ‘কর্ম কর, ফলের চিন্তা করো না’ (গীতা ২.৪৭)

অনেক সময় আমরা অতীত ভুলের জন্য ভবিষ্যতে কিছু করতে সাহস পাই না। ভগবান কৃষ্ণ এখানে পরামর্শ দিচ্ছেন, শুধু কাজ করো, ফল নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। পরীক্ষায় খারাপ ফল করলে পড়াশোনা বন্ধ করে দিলে চলবে? না! বরং নতুন উদ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সাফল্য-ব্যর্থতা আসে-যায়, কিন্তু পরিশ্রম কখনো বিফলে যায় না।

২. ‘সুখ-দুঃখ সমানভাবে গ্রহণ করো’ (গীতা ২.৩৮)

জীবনে সুখ যেমন থাকবে, তেমনই থাকবে কষ্টও। কিন্তু যদি তুমি শুধু কষ্টের দিকেই তাকিয়ে থাকো, তবে ভবিষ্যৎ তুমি নিজের হাতেই ধ্বংস করে ফেলবে। ধরা যাক, তুমি কোনো বন্ধুকে বিশ্বাস করে ঠকেছো। তাই বলে কি নতুন বন্ধুত্ব গড়বে না? অবশ্যই করবে! অতীতের কষ্ট থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাও।

৩. ‘আত্মবিশ্বাস ধরে রাখো’ (গীতা ৬.৫)

ভগবান কৃষ্ণ বলেছেন, ‘তুমি নিজেই তোমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু, আবার নিজেই তোমার শত্রু।’ যদি নিজের উপর বিশ্বাস রাখো, তবে অতীত ভুলে নতুন শুরু করতে পারবে। কোনো একটা কাজ তুমি হয়তো একবার করেছ, ব্যর্থ হয়েছ। তার মানে এই নয় যে তুমি পারবে না। নিজেকে বোঝাও, ‘আমি পারব’।

৪. ‘সংযমী হও, আবেগের দাস হয়ো না’ (গীতা ৬.১৬-১৭)

আমাদের অনেক ব্যর্থতার কারণ হলো অযথা আবেগের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া। দুঃখ পেলে, রাগ পেলে, হতাশা এলে আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। গীতা শেখায়, আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করো, কিন্তু দমন করো না। ধরা যাক, প্রেমে ব্যর্থ হয়েছো, এর মানে এই নয় যে তোমার জীবন শেষ। বরং এটা একটা অভিজ্ঞতা, যা ভবিষ্যতে তোমাকে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

৫. ‘অহংকার ত্যাগ করো’ (গীতা ১৮.৫৮)

অনেক সময় আমরা নিজের ভুলকে স্বীকার করতে চাই না, ফলে বারবার একই ভুল করি। কৃষ্ণ এখানে বলেছেন, অহংকার পরিত্যাগ করো এবং নম্রতা শেখো। যদি তুমি নিজের ভুল স্বীকার করো, তবে ভবিষ্যতে একই ভুল হবে না। যেমন, কোনো কাজের জন্য যদি কাউকে দায়ী করার বদলে নিজের দায়িত্ব স্বীকার করো, তাহলে তুমি দ্রুত উন্নতি করবে।

৬. ‘অপরের সাথে তুলনা করো না’ (গীতা ১৮.৪৫-৪৬)

আমরা নিজেদের জীবনে সবচেয়ে বেশি হতাশ হই অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে। ধরা যাক, তোমার বন্ধু ভালো চাকরি পেয়ে গেছে, আর তুমি এখনো সংগ্রাম করছো। গীতা বলে, প্রত্যেকের নিজস্ব কর্ম এবং যোগ্যতা আছে। তাই নিজের পথেই এগিয়ে যাও, অন্যের সাথে তুলনা করে নিজের মনোবল নষ্ট কোরো না।

৭. ‘ভগবানের ওপর বিশ্বাস রাখো’ (গীতা ১৮.৬৬)

শেষ টিপসটা হলো, ভগবানের প্রতি বিশ্বাস রাখা। সব কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তাই মাঝে মাঝে আমাদের বিশ্বাসের উপর ভরসা করতে হয়। জীবনে কঠিন সময় আসবে, কিন্তু কৃষ্ণ বলেছেন, ‘তুমি শুধু আমার শরণাগত হও, আমি তোমার সমস্ত পাপ মোচন করব এবং তোমাকে মুক্তি দেব।’ তাই সব সময় ভরসা রাখো, সব ঠিক হয়ে যাবে।

শেষ কথা: নতুন শুরুর পথে এগিয়ে যাও

অতীতের ভুল আমাদের শেখায়, কিন্তু সেটাকে আঁকড়ে ধরে থাকলে জীবন থমকে যায়। গীতার শিক্ষা আমাদের বলে, কষ্ট, ব্যর্থতা, অনুশোচনা, এসবের বাইরে গিয়ে নতুনভাবে বাঁচো। আগামীকাল একটা নতুন দিন, নতুন সুযোগ।

তাহলে আর দেরি কেন? আজই নিজের অতীতের ভুলগুলোকে বিদায় জানাও, গীতার পথ ধরে এগিয়ে চলো, ভবিষ্যৎ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top