আমাদের জীবন এখন “EMI, EMI” আর “Salary কবে আসবে?” এর মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। মাসের ২৫ তারিখেই মনে হয় যেন ব্যাংক ব্যালেন্স ধুঁকতে ধুঁকতে হাফ ছেড়ে বাঁচতে চাইছে! অথচ, কয়েক হাজার বছর আগেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্গীতায় আমাদের শেখালেন অর্থনৈতিক চাপ সামলানোর পথ। চলুন দেখি কীভাবে গীতার শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের ফিনান্স ঠিকঠাক রাখতে পারি।
১. লোভ সংযম করুন – (গীতা ২.৭১)
“যে ব্যক্তি সকল ইচ্ছা ত্যাগ করেছে এবং যার মন কোনো আকাঙ্ক্ষায় আবদ্ধ নয়, সে প্রকৃত শান্তি লাভ করে।”
আজকের যুগে আমরা যা দেখি, তাই চাই! নতুন ফোন, ব্র্যান্ডেড জামা, উইকেন্ড ট্রিপ, এসব চাহিদার শেষ নেই। কিন্তু গীতা বলছে, যদি তুমি শান্তি চাও, তাহলে লোভ সংযম করো। “Sale” দেখলেই কেনার লোভ সংবরণ করতে পারলে মাসের শেষের দুঃখ কমে যাবে!
কী করতে পারি?
- বাজেট বানাও এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়াও।
- প্রয়োজনীয় এবং বিলাসী জিনিসের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে শেখো।
২. কর্ম কর, ফল নিয়ে চিন্তা করো না – (গীতা ২.৪৭)
“কেবলমাত্র কর্ম করার অধিকার তোমার, কিন্তু তার ফল নিয়ে চিন্তা করার অধিকার তোমার নয়।”
আমরা অনেক সময় বেশি টাকা আয় করার জন্য শর্টকাট খুঁজি বা রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু গীতা বলছে, নিয়মিত কঠোর পরিশ্রম করো, ফলের চিন্তা ছেড়ে দাও। তুমি যদি কাজের প্রতি মনোযোগী হও, তাহলে অর্থনৈতিক উন্নতি এমনিতেই হবে।
কী করতে পারি?
- লোভনীয় স্কিমে না গিয়ে ধৈর্যের সাথে সঞ্চয় করো।
- ভালো ক্যারিয়ার স্কিল শেখো, ফ্রিল্যান্সিং বা ব্যবসার সুযোগ খুঁজে বের করো।
৩. সমতা বজায় রাখো – (গীতা ৫.১৮)
“যে ব্যক্তি ধনী-গরিব সকলের প্রতি সমদৃষ্টি বজায় রাখে, সে প্রকৃত জ্ঞানী।”
আমাদের অনেক সময় বড়লোকদের দেখে হিংসা হয় বা গরিবদের অবহেলা করি। কিন্তু এই মানসিকতা আমাদের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিনয়ী হও, এবং নিজের অবস্থা স্বীকার করে নিয়ে উন্নতির চেষ্টা করো।
কী করতে পারি?
- অহংকার বাদ দিয়ে নিজের সামর্থ্যের মধ্যে খুশি থাকো।
- বিনিয়োগের সময় বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নাও।
৪. সঞ্চয় করো, কিন্তু কৃপণতা নয় – (গীতা ৬.১৬-১৭)
“অত্যধিক আহার করা বা একেবারেই না খাওয়া, অত্যধিক ঘুমানো বা একেবারেই না ঘুমানো, এগুলো কারও পক্ষে ভালো নয়।”
অর্থাৎ, বেশি খরচ যেমন খারাপ, তেমনি একেবারে কিছু না খরচ করাও খারাপ। অনেকেই টাকার পেছনে এতটাই ছুটে যে জীবনের আনন্দটাই হারিয়ে ফেলে। আবার, কেউ কেউ একদমই সঞ্চয় করেন না। এই দুইয়ের মাঝামাঝি থাকতে হবে।
কী করতে পারি?
- মাসের শুরুতেই কিছু টাকা সঞ্চয় করার অভ্যাস গড়ে তোলো।
- অভিজ্ঞতা অর্জনে (ট্রেনিং, কোর্স) খরচ করো, যা ভবিষ্যতে আয়ের পথ খুলবে।
৫. ঋণ নেওয়ার আগে দশবার ভাবো – (গীতা ১৬.২১)
“লোভ, ক্রোধ ও আসক্তি, এই তিনটি নরকের দ্বার।”
আজকাল EMI-র সুবিধা দেখে আমরা অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য ঋণ নিয়ে ফেলি, পরে তা শোধ করতে গিয়ে মাথায় হাত! গীতা বলে, লোভ কমাও, কারণ ঋণের ফাঁদে পড়লে মানসিক শান্তি নষ্ট হয়।
কী করতে পারি?
- শুধুমাত্র অত্যন্ত জরুরি অবস্থায় ঋণ নাও।
- যদি ঋণ নিতেই হয়, তবে আগে পরিশোধের পরিকল্পনা করো।
৬. দান করার অভ্যাস গড়ো – (গীতা ১৭.২০)
“যে দান ফলের প্রত্যাশা না করে করা হয়, তা প্রকৃত দান।”
টাকা শুধু নিজের জন্য রাখলেই সুখ আসে না। কিছু দান করলে মনে শান্তি আসে, যা পরোক্ষভাবে আমাদের অর্থনৈতিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কী করতে পারি?
- আয়ের ১-৫% দান করার অভ্যাস গড়ে তুলো।
- দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বই কিনে দাও, অথবা কারও চিকিৎসার খরচ বহন করো।
৭. মানসিক শান্তিই প্রকৃত সম্পদ – (গীতা ৬.২৩)
“যেখানে মন শান্ত থাকে, সেখানেই প্রকৃত সুখ।”
অনেক টাকা থাকলেই সুখী হওয়া যায় না। যদি মাথার মধ্যে হাজার চিন্তা ঘুরপাক খায়, তাহলে তুমি যতই অর্থ উপার্জন করো, ততই অসুখী হবে। তাই মানসিক শান্তির দিকে নজর দাও।
কী করতে পারি?
- প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করো।
- সামাজিক প্রতিযোগিতার ফাঁদে পড়ে অপ্রয়োজনীয় খরচ কোরো না।
উপসংহার: গীতার শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে চলো
অর্থনৈতিক চাপ জীবনের একটি অংশ, কিন্তু তা আমাদের জীবন শাসন করবে না, যদি আমরা গীতার শিক্ষা গ্রহণ করি। লোভ কমানো, সংযম রাখা, সঞ্চয় করা, অহংকার না করা, এসব অভ্যাস গড়ে তুললে টাকা আসবেই, শান্তিও থাকবে।
তাই আর দেরি কোরো না, আজ থেকেই গীতার এই ৭টি শিক্ষা মেনে নিয়ে নিজের অর্থনৈতিক জীবনকে সুসংহত করো!