অলসতা কাটাতে গীতার ৬টি কার্যকরী উপদেশ

আজকের যুগে অলসতা আমাদের সবারই একটা বড় সমস্যা। পড়াশোনা, কাজ, কিংবা ব্যক্তিগত উন্নতির পথে অলসতা যেন এক অদৃশ্য বাধা। “কাল থেকে শুরু করবো”, “সময় পেলেই করবো”—এমন অজুহাত আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে দেয় না। কিন্তু ভাবুন তো, হাজার বছর আগেও মানুষ একই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে! মহাভারতের মহান গ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা আমাদের অলসতা কাটিয়ে জীবনে সফলতার পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দারুণ কিছু শিক্ষা দিয়েছে। আজ আমরা গীতার ৬টি কার্যকরী উপদেশ জানবো যা আপনাকে অলসতা দূর করতে সাহায্য করবে।

১. কর্তব্যপালনই প্রধান (কর্মযোগ)

গীতায় বলা হয়েছে— “কর্ম কর, ফলের আশা করো না” (অধ্যায় ২, শ্লোক ৪৭)।

আমরা প্রায়ই ফলাফল নিয়ে এতটাই চিন্তিত থাকি যে কাজটাই শুরু করতে পারি না। পরীক্ষায় ভালো নম্বর, চাকরিতে উন্নতি—এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে করতে আমরা একসময় অলস হয়ে যাই। গীতা বলে, শুধু নিজের কাজটা শুরু করো এবং সেটাই মনোযোগ দিয়ে করো।

কীভাবে কাজে লাগাবেন:

  • প্রতিদিন ছোট ছোট টাস্ক ঠিক করুন এবং সেগুলো শেষ করার দিকে মনোযোগ দিন।
  • ফলাফল নিয়ে বেশি চিন্তা না করে নিজের দক্ষতার উন্নতির দিকে নজর দিন।

২. আত্মনিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলা (সংযম)

গীতা শিক্ষা দেয় যে সফলতার জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। অধ্যায় ৬, শ্লোক ১৬-১৭-তে বলা হয়েছে, “সংযমী ব্যক্তিই প্রকৃত সফলতা লাভ করে।”

আমরা সোশ্যাল মিডিয়া, সিরিজ ব়িঞ্জ-ওয়াচিং, কিংবা ঘুমিয়ে অলসতা বাড়িয়ে তুলি। কিন্তু নিজের ইচ্ছাশক্তিকে সংযত করলে সফলতা নিশ্চিত।

কীভাবে কাজে লাগাবেন:

  • অযথা সময় নষ্টের বিষয়গুলো লিখে ফেলুন এবং ধীরে ধীরে সেগুলো কমান।
  • প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট ধ্যান বা মেডিটেশন করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৩. সঠিক সাহস ও আত্মবিশ্বাস (অভয়)

গীতায় বারবার বলা হয়েছে, “ভয় ত্যাগ করো” (অধ্যায় ১৮, শ্লোক ৬৬)। ভয়ের কারণে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ এড়িয়ে চলি এবং তা অলসতাকে বাড়িয়ে তোলে।

কীভাবে কাজে লাগাবেন:

  • নিজেকে বারবার বলুন: “আমি পারবো” এবং ছোট ছোট সাফল্য উদযাপন করুন।
  • নতুন কিছু শিখতে বা চেষ্টা করতে দ্বিধা করবেন না, ব্যর্থতা থেকেই শেখা যায়।

৪. ন্যায়পরায়ণতা ও অধ্যবসায় (ধৈর্য)

গীতা বলে, “ধৈর্য ও অধ্যবসায়ই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।” (অধ্যায় ৩, শ্লোক ১৯)

ধৈর্য না থাকলে আমরা একটা কাজ মাঝপথে ছেড়ে দেই। অনেক সময় ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের অভাবেই অলসতা আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রাখে।

কীভাবে কাজে লাগাবেন:

  • বড় লক্ষ্যকে ছোট অংশে ভাগ করুন এবং ধীরে ধীরে এগিয়ে যান।
  • একবার ব্যর্থ হলেও হাল ছেড়ে দেবেন না, চেষ্টা চালিয়ে যান।

৫. প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসরণ (সমন্বিত জীবনযাপন)

গীতা আমাদের শেখায় প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবনযাপনের গুরুত্ব (অধ্যায় ৩, শ্লোক ১৪)।

অলসতা আসে যখন আমাদের দিনযাপনে কোনো শৃঙ্খলা থাকে না। দেরি করে ঘুমানো, অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি অলসতাকে বাড়িয়ে তোলে।

কীভাবে কাজে লাগাবেন:

  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান ও জাগুন।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং শরীরচর্চা করুন।

৬. নিজেকে আত্মারূপে দেখা (আত্মজ্ঞান)

গীতা বলে, “তুমি এই দেহ নও, তুমি আত্মা” (অধ্যায় ২, শ্লোক ১৩)। এই উপলব্ধি আমাদের অলসতা থেকে মুক্ত করে স্ব-উন্নতির পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

যদি আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য গভীর, তাহলে অলসতার কোনও স্থান থাকবে না।

কীভাবে কাজে লাগাবেন:

  • নিয়মিত আত্ম-অনুশীলন ও মননশীল বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • নিজের লক্ষ্যগুলো পরিস্কার করুন এবং সেগুলোর দিকে এগিয়ে যান।

উপসংহার

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শুধু ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, এটি আমাদের জীবনের দিশারি হতে পারে। অলসতা কাটানোর জন্য গীতার এই শিক্ষা গ্রহণ করলে জীবন সত্যিই পরিবর্তিত হতে পারে।

আজ থেকেই শুরু করুন ছোট ছোট পদক্ষেপ, কারণ মনে রাখবেন— “কর্ম কর, কারণ কর্মই তোমার ধর্ম।” অলসতা আপনাকে পিছিয়ে দেবে, কিন্তু আপনি চাইলে এগিয়ে যেতে পারবেন গীতার এই মূল্যবান উপদেশগুলোর মাধ্যমে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *