আত্মসম্মান বাড়ানোর ৬টি সহজ পদ্ধতি ভগবদ্গীতার আলোকে

আমরা তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আত্মবিশ্বাসের অভাব, অনিশ্চয়তা, এবং নেতিবাচক চিন্তার কারণে নিজেদের মূল্যায়ন করতে ভুল করি। সামাজিক মিডিয়ার যুগে আমরা অন্যদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়ি, আর এতে আমাদের আত্মসম্মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু ভগবদ্গীতা আমাদের শেখায় যে, প্রকৃত আত্মসম্মান বাহ্যিক কিছু নয়; এটি আমাদের অন্তরের একটি গুণ যা আমরা নিজেরাই গড়ে তুলতে পারি। আজকের লেখায়, ভগবদ্গীতার আলোকে আমরা আত্মসম্মান বাড়ানোর ৬টি সহজ কিন্তু কার্যকর উপায় আলোচনা করব।

১. নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হোন (স্বধর্ম পালন)

ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে, “স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ।” অর্থাৎ, নিজের স্বভাব অনুযায়ী কাজ করাই উত্তম, অন্যের পথে হাঁটা ভয়ের কারণ হতে পারে। নিজের জীবনযাত্রা, ক্যারিয়ার বা শিক্ষা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে তুলনা না করে নিজের লক্ষ্য এবং গুণাবলীর উপর মনোযোগ দিন। প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজকে গুরুত্ব দিন এবং এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

প্রাকটিক্যাল টিপস:

  • নিজের প্যাশন এবং শক্তির দিকে মনোযোগ দিন।
  • দৈনন্দিন কাজের একটি তালিকা তৈরি করুন এবং ধাপে ধাপে এগোন।

২. আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সংযম অনুশীলন করুন (সংযম)

ভগবদ্গীতার ৬:৫ শ্লোকে বলা হয়েছে, “উদ্ধরেদ আত্মনাত্মানং নাত্মানমবসাদয়েৎ।” অর্থাৎ, নিজের দ্বারা নিজেকে উন্নীত করুন, নিজেকে নিচে নামাবেন না। আবেগ ও ইচ্ছার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে শিখুন।

প্রাকটিক্যাল টিপস:

  • প্রতিদিন ধ্যান ও যোগব্যায়াম চর্চা করুন।
  • অহেতুক সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারের পরিবর্তে নিজের দক্ষতা উন্নয়নে সময় দিন।

৩. ফলের আশা ছেড়ে কাজের প্রতি মনোযোগ দিন (কর্মযোগ)

ভগবদ্গীতার বিখ্যাত শ্লোক “কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।” আমাদের শেখায় যে, আমরা শুধুমাত্র কর্মের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি, ফলের উপর নয়। অতএব, ফলের চিন্তা ছেড়ে নিজের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিন।

প্রাকটিক্যাল টিপস:

  • যেকোনো কাজকে পুরো মনোযোগ দিয়ে করুন।
  • ছোট ছোট অর্জনকে উদযাপন করুন এবং অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন।

৪. ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলুন (সদ্ভাবনা)

ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে, “যোগঃ কর্মসুকৌশলম।” অর্থাৎ, কাজের মধ্যে দক্ষতা অর্জনই প্রকৃত যোগ। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ধরে রাখলে আপনি সব পরিস্থিতিতে উন্নতি করতে পারবেন। আত্মসম্মান বাড়ানোর জন্য ইতিবাচক মনোভাব অত্যন্ত জরুরি।

প্রাকটিক্যাল টিপস:

  • প্রতিদিন সকালে নিজের জন্য একটি ইতিবাচক প্রতিজ্ঞা করুন।
  • নেতিবাচক চিন্তা আসলে তা ইতিবাচক চিন্তায় পরিবর্তনের চেষ্টা করুন।

৫. সৎ ও নৈতিক জীবনযাপন করুন (সত্যনিষ্ঠা)

ভগবদ্গীতায় উল্লেখ রয়েছে, “সত্যং ব্রূইয়াত প্রিয়ং ব্রূইয়াত।” আত্মসম্মান বাড়ানোর অন্যতম উপায় হলো সততা ও নৈতিকতার সঙ্গে জীবনযাপন করা। অন্যকে ঠকিয়ে নয়, বরং নিজের সত্যতা এবং সৎ প্রচেষ্টায় সফল হতে হবে।

প্রাকটিক্যাল টিপস:

  • প্রতিদিনের কাজে সততা বজায় রাখুন।
  • নিজের নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তুলুন এবং সেটার সঙ্গে আপস করবেন না।

৬. ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখুন (ভক্তি)

ভগবদ্গীতা বলে, “মা শুচঃ, কেবল আমার উপর ভরসা রাখো।” আত্মসম্মান বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো জীবনের সকল পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের উপর আস্থা রাখা এবং আত্মবিশ্বাস হারিয়ে না ফেলা।

প্রাকটিক্যাল টিপস:

  • প্রতিদিন ধ্যান করুন এবং ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
  • কঠিন সময়েও ধৈর্য রাখুন এবং বিশ্বাস রাখুন যে সব ঠিক হয়ে যাবে।

উপসংহার

আমাদের আত্মসম্মান বাইরের কোনো কিছুতে নির্ভর করে না; এটি আমাদের অন্তরের শক্তি, মনোভাব, এবং জীবনযাত্রার মাধ্যমে গড়ে ওঠে। ভগবদ্গীতার শিক্ষা আমাদের শেখায় যে, সঠিক পথে থাকলে এবং ধৈর্য ও বিশ্বাস রাখলে আত্মসম্মান অর্জন করা সম্ভব। তাই আজ থেকেই নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন, নিজের পথে চলুন, এবং গীতার জ্ঞানের আলোকে আত্মসম্মান বাড়ান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top