আমাদের অনেকেরই একটা বড় সমস্যা হলো পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখা। বই খুললেই হঠাৎ ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, কিংবা ইউটিউবের নোটিফিকেশন যেন ডাকে! পরীক্ষার সময় এসে গেলে চাপ বেড়ে যায়, কিন্তু মনোযোগী হয়ে পড়া আর সম্ভব হয় না। এই সমস্যার সমাধান কী?
ভগবদ্গীতা শুধু আধ্যাত্মিক জ্ঞান নয়, এটি জীবন চালনার এক অসাধারণ নির্দেশিকা। মনোযোগ বাড়ানোর জন্য গীতার কিছু শিক্ষা অনুসরণ করলে আমাদের পড়াশোনার দক্ষতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে পারে। চলুন দেখে নিই ৫টি কার্যকরী উপায়:
১. নিষ্কাম কর্ম: ফলের চিন্তা নয়, কাজে ফোকাস করুন
ভগবদ্গীতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো: “কর্মণ্যে-বাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।” অর্থাৎ, তুমি শুধু কাজের (অধ্যয়নের) প্রতি যত্নশীল হও, ফলের চিন্তা কোরো না।
আমরা অনেক সময় পড়তে বসে চিন্তা করি, “পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাব তো?” কিংবা “ক্যারিয়ার কী হবে?” এই দুশ্চিন্তা মনোযোগ নষ্ট করে। তাই পড়ার সময় শুধু পড়ার ওপর ফোকাস করুন। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন, ফলাফল নিজে থেকেই আসবে।
কীভাবে প্রয়োগ করবেন?
- পড়ার সময় “ফল” নিয়ে না ভেবে, পড়ার “প্রক্রিয়া” উপভোগ করুন।
- নির্দিষ্ট একটি সময় নির্ধারণ করুন, সেই সময় শুধু পড়াতেই মন দিন।
- ভালো নম্বরের চেয়ে শেখার আনন্দকে গুরুত্ব দিন।
২. স্বধর্মে স্থিতি: নিজের উপযুক্ত পদ্ধতি বেছে নিন
গীতায় বলা হয়েছে, “শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাত্।” অর্থাৎ, অন্যের পথে না হাঁটে নিজের জন্য উপযুক্ত পথ বেছে নেওয়াই শ্রেয়।
প্রত্যেকের শেখার ধরন আলাদা। কেউ অডিও শুনে ভালো শেখে, কেউ লেখার মাধ্যমে, কেউবা গ্রুপ স্টাডির মাধ্যমে। নিজের উপযুক্ত পড়ার কৌশল খুঁজে বের করুন।
কীভাবে প্রয়োগ করবেন?
- অডিও বুক শুনতে ভালো লাগে? তাহলে পড়ার পাশাপাশি অডিও লেকচার শুনুন।
- গ্রুপ স্টাডি করলে ভালো মনে থাকে? তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করুন।
- সকালে পড়তে ভালো লাগে, না রাতে? নিজের জন্য উপযুক্ত সময় খুঁজে বের করুন।
৩. ধ্যান ও মনোসংযোগ: একাগ্রতা বাড়ানোর শক্তি
গীতায় কৃষ্ণ বলেছেন, “যোগঃ চিত্তবৃত্তি নিরোধঃ”, অর্থাৎ মনোসংযোগের মাধ্যমেই প্রকৃত জ্ঞান লাভ সম্ভব।
আমরা যখন একসঙ্গে অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে থাকি, তখন পড়ায় মন বসে না। মনোযোগী হতে হলে আমাদের মনকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। ধ্যান করা এক্ষেত্রে দারুণ উপকারী।
কীভাবে প্রয়োগ করবেন?
- প্রতিদিন মাত্র ৫-১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর মনোযোগ দিন।
- পড়ার সময় ফোন সাইলেন্ট মোডে রাখুন এবং একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পড়ুন।
- একসঙ্গে অনেক কাজ না করে, একবারে একটি বিষয়ে ফোকাস করুন।
৪. সংযম ও নিয়ন্ত্রণ: ইন্দ্রিয়কে বশে আনুন
গীতায় কৃষ্ণ বলেন, “যঃ শত্রুমিভ স্যন্ধত্তে, তস্য প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিতা।” অর্থাৎ, যিনি নিজের ইন্দ্রিয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেন, তিনিই প্রকৃতভাবে স্থির বুদ্ধিসম্পন্ন।
আজকের যুগে সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল গেমস, ওয়েব সিরিজ পড়ার সময় আমাদের সবচেয়ে বড় বিভ্রান্তি। ইচ্ছাশক্তি বাড়িয়ে এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
কীভাবে প্রয়োগ করবেন?
- পড়ার সময় ফোন দূরে রাখুন বা “ডিস্টার্ব না করুন” মোড চালু করুন।
- নির্দিষ্ট সময়ে বিনোদন করুন, কিন্তু সেটার নিয়ন্ত্রণ আপনাকে করতে হবে।
- প্রতিদিন একটু একটু করে ফোকাস বাড়ানোর অনুশীলন করুন।
৫. আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায়: নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন
ভগবদ্গীতায় কৃষ্ণ বলেন, “উদ্ধরেত আত্মনাত্মানম্।” অর্থাৎ, নিজেকে নিজেই উত্তোলন করো। কেউ তোমার পরিবর্তে পড়াশোনা করতে পারবে না, কেউ তোমার জীবন বদলে দিতে পারবে না, এটা তোমাকেই করতে হবে।
কীভাবে প্রয়োগ করবেন?
- “আমি পারব না” এই মানসিকতা বাদ দিন। পড়াশোনায় ধৈর্য ধরুন।
- যে বিষয়গুলো কঠিন মনে হয়, সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন।
- প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
উপসংহার: নিজেকে পরিবর্তন করুন, সফলতা আসবেই
ভগবদ্গীতার শিক্ষা অনুসরণ করলে শুধু পড়াশোনায় মনোযোগই বাড়বে না, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনি আরও সফল হবেন। সবচেয়ে বড় কথা, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন এবং ধৈর্য হারাবেন না। পড়াশোনা শুধু নম্বরের জন্য নয়, বরং নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য করুন।
শেষ কথা, আপনি যদি নিয়মিত চেষ্টা করেন, তাহলে সফলতা আপনার হাতের মুঠোয় আসবেই। তাই আজ থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার সংকল্প নিন এবং ভগবদ্গীতার এই শিক্ষাগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করুন!