আমাদের অনেকেরই মনের মধ্যে এই প্রশ্ন জাগে, “আমি জীবনে কী করতে চাই?” “আমার আসল প্রতিভা কী?” এই উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা প্রায়ই হতাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু ভাবুন তো, যদি মহাভারতের গীতাই আপনাকে সেই উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করে?
ভগবদ গীতা কেবল একটি ধর্মগ্রন্থ নয়; এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের পথ দেখানোর জন্য অনুপ্রেরণার এক অসাধারণ উৎস। গীতার মধ্যে এমন অনেক দিকনির্দেশনা রয়েছে, যা অনুসরণ করলে আমরা আমাদের প্রতিভা আবিষ্কার করতে পারি। আজকের আলোচনায় আমরা গীতার ৬টি দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ এবং প্রতিভা আবিষ্কারে সাহায্য করবে।
১. নিজের ধর্ম (স্বধর্ম) খুঁজুন
গীতা বলে: “স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ” (অধ্যায় ৩, শ্লোক ৩৫)। অর্থাৎ, নিজের ধর্ম বা স্বভাব অনুযায়ী কাজ করাই শ্রেষ্ঠ।
আমাদের জীবনে অনেকেই অন্যদের দেখে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু গীতার শিক্ষা হলো, অন্যদের পথ অনুসরণ না করে নিজের স্বাভাবিক গুণাবলী বুঝে সেই অনুযায়ী কাজ করা।
বাস্তব উদাহরণ:
আপনি হয়তো দেখছেন, আপনার বন্ধুরা কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইছে। কিন্তু আপনার যদি ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ থাকে, তাহলে সেটাই আপনার স্বধর্ম। অন্যদের মতো হওয়ার চেষ্টা না করে নিজের আগ্রহ ও দক্ষতাকে গুরুত্ব দিন।
২. কর্মের প্রতি মনোযোগ দিন, ফলের প্রতি নয়
গীতা বলে: “কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।” (অধ্যায় ২, শ্লোক ৪৭)
আপনার প্রতিভা বিকাশের পথে অনেক সময় ফলাফল নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা আপনাকে পিছিয়ে দিতে পারে। গীতার এই শিক্ষা অনুযায়ী, আপনি শুধু নিজের কাজটি মন দিয়ে করুন। ফলাফল নিজেই আপনার কাছে চলে আসবে।
বাস্তব উদাহরণ:
ধরুন, আপনি গান শিখছেন। প্রতিযোগিতায় প্রথম হবে কি না তা ভেবে গান শেখা বন্ধ করে দেবেন না। বরং নিয়মিত রেওয়াজ চালিয়ে যান। সময়মতো আপনার পরিশ্রমের ফল পাবেন।
৩. আত্মবিশ্বাস তৈরি করুন (আত্মশক্তি চর্চা)
গীতায় বলা হয়েছে, “উদ্ধরেদ্ আত্মন আত্মানং ন আত্মানমবসাদয়েত” (অধ্যায় ৬, শ্লোক ৫)। নিজেকে উদ্ধার করার দায়িত্ব আপনার নিজের।
নিজের প্রতিভা আবিষ্কারের জন্য প্রথমে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। আত্মবিশ্বাস ছাড়া কোনো ক্ষেত্রেই সফল হওয়া সম্ভব নয়।
বাস্তব উদাহরণ:
আপনি যদি মনে করেন যে, “আমি এটা পারব না,” তাহলে তা কখনোই সম্ভব হবে না। নিজেকে বলুন, “আমি পারব,” এবং সেই অনুযায়ী কাজ করুন।
৪. সংযম ও অধ্যবসায় বজায় রাখুন
গীতা আমাদের শিক্ষা দেয়, “যোগস্থঃ কুরু কর্মাণি” (অধ্যায় ২, শ্লোক ৪৮)। সংযমের সাথে কাজ করা এবং ধৈর্য ধরে লক্ষ্য অর্জনের জন্য অধ্যবসায় করা গুরুত্বপূর্ণ।
বাস্তব উদাহরণ:
আপনার লক্ষ্য যদি ভালো ক্রীড়াবিদ হওয়া হয়, তবে প্রতিদিন অনুশীলন করতে হবে। মাঝে মাঝে ব্যর্থতা আসবে, কিন্তু ধৈর্য হারালে চলবে না।
৫. মোহ ত্যাগ করুন
গীতায় বলা হয়েছে, “মোহঃ কলিলমুত্সৃজ্য” (অধ্যায় ১৮, শ্লোক ৭৩)। অযথা মোহ ও অজ্ঞান আমাদের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে। প্রতিভা আবিষ্কারের জন্য নিজেকে সব ধরনের বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত করতে হবে।
বাস্তব উদাহরণ:
অনেকেই অন্যদের কথা শুনে নিজের সিদ্ধান্ত বদলায়। আপনি যদি একজন ডিজাইনার হতে চান, তবে অন্যদের “ডিজাইনিংয়ে ভবিষ্যৎ নেই” মন্তব্য শুনে নিজের লক্ষ্য ত্যাগ করবেন না। নিজের বিশ্বাসে স্থির থাকুন।
৬. সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন
গীতা বলে: “দুঃখেস্বনুদ্বিগ্নমনাঃ সুখেষু বিগতস্পৃহঃ” (অধ্যায় ২, শ্লোক ১৫)। জীবনে সুখ-দুঃখ আসবেই। কিন্তু আপনাকে প্রতিকূলতার মধ্যেও দৃঢ় থাকতে হবে।
বাস্তব উদাহরণ:
মনে করুন, আপনি একজন লেখক হতে চান, কিন্তু প্রথম কয়েকটি লেখা কেউ পছন্দ করেনি। এতে হতাশ না হয়ে আরও ভালো লেখার চেষ্টায় মন দিন। দুঃখের মুহূর্তগুলি আপনাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
গীতার শিক্ষায় সফলতার পথ
গীতার এই শিক্ষাগুলি কেবল প্রতিভা আবিষ্কারেই নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। যদি আপনি গীতার এই নির্দেশনা গুলি মেনে চলেন, তাহলে জীবনের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হবে।
শুরু করুন আজ থেকেই
ভগবদ গীতার মূল বার্তাই হলো, “আপনি আপনার নিজের জীবন গড়ার কারিগর।” তাই দেরি না করে আজই শুরু করুন।
চ্যালেঞ্জ নিন:
- নিজের আগ্রহ ও দক্ষতা লিখে রাখুন।
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট নিজের প্রতিভা বিকাশে সময় দিন।
- অন্যদের মতামতের চাপে নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসবেন না।
মনে রাখবেন, প্রতিভা আবিষ্কার করার জন্য ধৈর্য, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসই মূল চাবিকাঠি। শুরু করুন, কারণ আপনার ভেতরে লুকিয়ে আছে অসীম সম্ভাবনা।