আপনার প্রেমিক/প্রেমিকার অবহেলা? ভগবদ্গীতা বলছে ৫টি সমাধান

প্রেম মানেই কি সবসময় ভালোবাসা, কেয়ার আর খুশির মুহূর্ত? নাহ্! মাঝে মাঝে সম্পর্কের মধ্যে আসে অবহেলা, ভুল বোঝাবুঝি আর মানসিক দূরত্ব। আপনি হয়তো দেখছেন, আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা আগের মতো সময় দেয় না, আপনার অনুভূতিগুলোকে গুরুত্ব দেয় না বা অকারণেই ঠান্ডা আচরণ করছে। এই অবস্থা আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, তাই না?

কিন্তু কী করবেন? একদম ব্রেকআপ করে দেবেন, নাকি স্রেফ সহ্য করবেন? ভগবদ্গীতা কিন্তু আমাদের এই সমস্যার মধ্যেও কিছু দারুণ সমাধান দিয়েছে! গীতার শিক্ষা শুধু আধ্যাত্মিক দিক নিয়েই নয়, বরং জীবনের যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতেও সাহায্য করে। চলুন, দেখে নেওয়া যাক গীতার আলোকে ৫টি দারুণ উপায়, যা আপনাকে এই পরিস্থিতি সামলাতে সাহায্য করবে।

১. আসক্তি নয়, ভালোবাসা করুন (Bhagavad Gita 2.47)

গীতায় বলা হয়েছে, 

“কর্মে তোমার অধিকার আছে, কিন্তু ফলের ওপর তোমার অধিকার নেই।”

মানে? ধরুন, আপনি আপনার প্রেমিক/প্রেমিকার জন্য অনেক কিছু করছেন, কিন্তু তার থেকে একই রকম প্রতিদান আশা করছেন। আর যখন সেটা পাচ্ছেন না, তখন মন খারাপ হচ্ছে। আসলে, সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো বিনিময়ের জন্য হয় না।

যদি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চান, তবে ভালোবাসা করুন কিন্তু আসক্ত হয়ে পড়বেন না। তাকে একটু স্পেস দিন, তার জীবনেও হয়তো ব্যক্তিগত কিছু সমস্যা আছে যেগুলোর জন্য সে দূরত্ব বজায় রাখছে। ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে।

আপনার করণীয়:

তার প্রতি ভালোবাসা কমাবেন না, কিন্তু নিজের সুখ শুধু তার প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল করবেন না।
নিজের জীবন, শখ, ক্যারিয়ার বা বন্ধুদের সময় দিন।

২. আত্মসম্মান বজায় রাখুন (Bhagavad Gita 6.5)

গীতায় বলা হয়েছে, 

“নিজেকে নিজে উত্তোলন করো, নিজেকে অবমূল্যায়ন কোরো না।”

আপনার আত্মসম্মান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা বারবার অবহেলা করে, কথা শোনে না, আপনাকে গুরুত্ব দেয় না,  তাহলে নিজেকে ছোট করবেন না। সম্পর্ক মানে সম্মান, ভালোবাসা, যত্ন। যদি এসব না থাকে, তাহলে বারবার কষ্ট পাওয়ার মানে নেই।

আপনার করণীয়:

 নিজের গুরুত্ব বুঝুন এবং আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন।
যদি সম্পর্ক একতরফা হয়ে যায়, তাহলে খোলাখুলি কথা বলুন।
যদি দেখেন বারবার অবহেলা পাচ্ছেন, তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন,  আপনি কি সত্যিই এই সম্পর্কের মধ্যে সুখী?

৩. ধৈর্য ধরুন, কিন্তু নিজের মূল্যায়ন করুন (Bhagavad Gita 18.63)

ভগবান কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, 

“আমি তোমাকে সত্য বলেছি, এখন সিদ্ধান্ত তোমার হাতে।”

এই লাইনটা মনে রাখবেন। সম্পর্ক মানে দুইজনের পারস্পরিক বোঝাপড়া, কিন্তু যদি শুধু আপনি একপাক্ষিকভাবে চেষ্টা করে যান, তাহলে সেটা বোঝার দরকার আছে।

ধরুন, আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা হঠাৎ বদলে গেছে, আপনাকে কম সময় দিচ্ছে। আগে ভালোবাসার কথা বলত, কিন্তু এখন যেন দূরে সরে যাচ্ছে। আগে হলে হয়তো আপনি প্রচণ্ড রেগে যেতেন, কিন্তু এখন ধৈর্য ধরে দেখুন,  সে কি সত্যিই ইচ্ছাকৃতভাবে এমন করছে, নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?

আপনার করণীয়:

ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি বুঝুন।
খোলাখুলি কথা বলুন, কোনো সমস্যা থাকলে সেটা বের করার চেষ্টা করুন।
যদি দেখেন সে ইচ্ছাকৃতভাবে দূরত্ব তৈরি করছে, তাহলে সিদ্ধান্ত আপনার। নিজেকে মূল্যায়ন করুন।

৪. প্রত্যাশার ভার কমান (Bhagavad Gita 5.12)

গীতায় বলা হয়েছে, 

“যে ব্যক্তি ফলের আশা না করে কাজ করে, সে সবসময় শান্তি পায়।”

অতিরিক্ত প্রত্যাশা অনেক সময় কষ্টের কারণ হয়। আপনি যদি মনে মনে ঠিক করে ফেলেন যে সে প্রতিদিন আপনাকে সময় দেবে, মেসেজ করবে, আপনার সব কথা শুনবে,  তাহলে এটা আপনার নিজের তৈরি চাপ। মানুষ সবসময় একই রকম থাকে না, সবার জীবনে ওঠা-নামা থাকে।

আপনার করণীয়:

 সম্পর্ককে সহজভাবে নিন।
যে ভালোবাসা দিচ্ছেন, তার জন্য কিছু প্রত্যাশা কমান।
নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকুন, নিজের স্বপ্ন, লক্ষ্য বা প্যাশনের দিকে ফোকাস করুন।

৫. নিজের সুখ নিজে তৈরি করুন (Bhagavad Gita 6.32)

ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে, 

“সত্যিকারের যোগী সেই, যে নিজের মতো অন্যের সুখ-দুঃখকেও অনুভব করতে পারে।”

আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা যদি ব্যস্ত থাকে, যদি আপনাকে সময় দিতে না পারে, তাহলে কি আপনার পুরো পৃথিবী থেমে যাবে? অবশ্যই না! আপনার জীবনে আরও অনেক কিছু আছে যা আপনাকে সুখী করতে পারে।

আপনার করণীয়:

 নিজের সুখের জন্য অন্য কারো ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হবেন না।
নতুন কিছু শিখুন, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান, নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন।
সম্পর্কের বাইরেও নিজের একটা আলাদা পরিচয় তৈরি করুন।

শেষ কথা: নিজেকে ভালোবাসুন, বাকিটা নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে

ভগবদ্গীতা আমাদের শেখায়, জীবনের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আপনি কারো ভালোবাসা জোর করে পেতে পারেন না, কিন্তু নিজের ভালোবাসা দিতে পারেন,  তা সে নিজের প্রতি হোক, কিংবা অন্যের প্রতি।

যদি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চান, তাহলে বোঝাপড়া করুন, স্পেস দিন, কিন্তু নিজের মূল্যায়ন করতে ভুলবেন না। আর যদি দেখেন যে সম্পর্ক আপনাকে কষ্টই দিচ্ছে, তাহলে সেটাকে জোর করে ধরে রাখার দরকার নেই।

সবশেষে মনে রাখুন,  আপনি নিজে যদি সুখী থাকেন, তাহলে আপনার চারপাশের সম্পর্কগুলোও স্বাভাবিকভাবেই সুন্দর হয়ে উঠবে! 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top