আমাদের জীবন এক অমূল্য সম্পদ, কিন্তু প্রায়ই আমরা নিজেকে আবিষ্কার করি সময় নষ্ট করার একটি চক্রে। সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোল করা, অপ্রয়োজনীয় চিন্তা, বা শুধুমাত্র কাজ না করার কারণে সময় হারিয়ে ফেলা আমাদের অনেকেরই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ভগবদ্গীতা আমাদের শেখায় সময় এবং জীবনের প্রকৃত মূল্য।
এই পোস্টে আমরা ভগবদ্গীতার সাতটি শিক্ষা অনুসরণ করে কীভাবে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারি তা জানবো। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য, যাঁরা স্বপ্ন পূরণের পথে রয়েছেন, এটি হতে পারে দিকনির্দেশনার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
১. সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন (Chapter 2, Verse 47)
ভগবদ্গীতা বলে, “কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।” অর্থাৎ, আপনার অধিকার কেবল কর্মে, ফলের উপর নয়।
অধিকাংশ সময় আমরা লক্ষ্যহীন ভাবে কাজ করি বা কোনো লক্ষ্য ছাড়াই সময় পার করি। এটি শুধু সময়ের অপচয় নয়, জীবনের অপচয়ও। সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং প্রতিদিন সেই লক্ষ্যের দিকে একটি ছোট পদক্ষেপ নিন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি একজন লেখক হতে চান, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট লিখুন।
২. আপনার দায়িত্ব পালন করুন (Chapter 3, Verse 8)
“নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং কর্ম জ্যায়ো হ্যকর্মণঃ।”
এই শ্লোক আমাদের বলে যে কর্ম করা বাধ্যতামূলক। অলস হয়ে বসে থাকা বা পরবর্তী দিনের জন্য কাজ ফেলে রাখা আমাদের উন্নতির পথে বাধা।
আপনার দায়িত্ব কী? যদি আপনি একজন ছাত্র হন, তাহলে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ দিন। চাকরিজীবী হলে, আপনার কাজ দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করুন। অলসতা সরিয়ে রেখে দায়িত্ব পালন করুন।
৩. মনের উপর নিয়ন্ত্রণ আনুন (Chapter 6, Verse 5)
“উদ্ধরেদাত্মনাত্মানং নাত্মানমবসাদয়েত।”
মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ না আনলে, এটি আপনাকে সময় নষ্টের দিকে ঠেলে দেবে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা রিল ভিডিও দেখার মতো জিনিসগুলি আকর্ষণীয়, কিন্তু এগুলি কতটা ফলপ্রসূ?
প্রতিদিন কিছুটা সময় ধ্যান বা যোগব্যায়ামের জন্য রাখুন। ধ্যান শুধু আপনার মনকে শান্ত করবে না, বরং এটি আপনার ফোকাস বাড়াবে।
৪. আসক্তি থেকে মুক্তি পান (Chapter 2, Verse 62-63)
“ধ্যাতো বিষয়ান্পুংসঃ সঙ্গস্তেষূপজায়তে।”
বিষয়বস্তু বা বস্তুর প্রতি আসক্তি আমাদের সময় নষ্ট করার প্রধান কারণ। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি গেম খেলার প্রতি আসক্ত হন, তাহলে এটি আপনার পড়াশোনা বা কাজকে প্রভাবিত করবে।
কীভাবে এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাবেন? প্রতিদিন নিজেকে একটি নির্দিষ্ট সময় দিন সেই কাজ করার জন্য, কিন্তু সময়ের বাইরে গিয়ে সেটি করবেন না।
৫. সঠিক সাহচর্য নির্বাচন করুন (Chapter 4, Verse 34)
“তদ্বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিব্রশ্নেন সেবয়া।”
আপনার সঙ্গীরা আপনার সময় ব্যবহারের পদ্ধতিতে একটি বড় প্রভাব ফেলে। ভুল সঙ্গী আপনাকে ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে।
এমন মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান যারা ইতিবাচক এবং আপনাকে অনুপ্রাণিত করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি একজন প্রোগ্রামার হতে চান, তাহলে এমন মানুষদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করুন যারা প্রোগ্রামিং সম্পর্কে আগ্রহী।
৬. মোক্ষ বা স্বাধীনতার পথে মনোযোগ দিন (Chapter 18, Verse 66)
“সর্বধর্মান্পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।”
এই শ্লোকটি আমাদের শেখায় যে জীবনের মূল উদ্দেশ্য হল নিজের উন্নতি করা। সময় নষ্ট না করে সেই জিনিসগুলি করুন যা আপনাকে মানসিক শান্তি এবং সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।
আপনার জীবনকে সরল করুন। অহেতুক কাজ এবং দায়িত্বগুলি বাদ দিন যা আপনার মূল উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করে।
৭. ধৈর্য ধরে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন (Chapter 18, Verse 78)
“যত্র যোগেশ্বরঃ কৃষ্ণো যত্র পার্থো ধনুর্ধরঃ।”
এই শ্লোক আমাদের শেখায়, যেখানে সঠিক জ্ঞান এবং কর্মের মিল থাকে, সেখানেই সাফল্য নিশ্চিত। আপনি হয়তো অনেক বাধার মুখোমুখি হচ্ছেন, কিন্তু নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন।
যেমন, যদি আপনি একটি নতুন স্কিল শিখতে চান, প্রথম দিকে কঠিন লাগতে পারে। কিন্তু নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে আপনি সফল হবেন।
ভগবদ্গীতার পাঠ জীবনের দিশা
ভগবদ্গীতার এই সাতটি শিক্ষা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে সময়ের মূল্য অপরিসীম। তরুণ প্রজন্ম হিসেবে আপনাদের অনেক স্বপ্ন এবং সুযোগ রয়েছে। সেগুলি বাস্তবায়িত করার জন্য সময়ের সদ্ব্যবহার করুন।
আজ থেকেই একটি ছোট পদক্ষেপ নিন। নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন, একটি রুটিন তৈরি করুন এবং প্রতিদিন নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত একটি সুযোগ। সময় নষ্ট না করে এই সুযোগগুলিকে কাজে লাগান।