কষ্টের মধ্যে শান্তি খুঁজে পাওয়ার ৭টি উপায় গীতার আলোকে

কষ্টের মধ্যে শান্তি খুঁজে পাওয়ার ৭টি উপায় গীতার আলোকে

জীবনে কষ্ট আসবে, এটা নিশ্চিত। পরীক্ষায় খারাপ ফল, চাকরির টেনশন, সম্পর্কের টানাপোড়েন, সবকিছুই কখনো না কখনো আমাদের মানসিক শান্তি নষ্ট করে। কিন্তু কীভাবে এই অশান্তির মাঝেও শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়? ভগবদ গীতা আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। গীতার শিক্ষায় আছে এমন কিছু দারুণ উপায়, যা অনুসরণ করলে কঠিন পরিস্থিতিতেও মানসিক স্থিতি বজায় রাখা সম্ভব।

১. নিজের কর্তব্য পালন করো, ফল নিয়ে চিন্তা কোরো না (কর্মযোগ – গীতা ২.৪৭)

একজন ছাত্র পরীক্ষার জন্য কঠোর পরিশ্রম করল, কিন্তু ফল খারাপ হলো। সে যদি গীতার এই শিক্ষা মেনে নিত, “কেবলমাত্র তোমার কর্তব্যের উপরই অধিকার, কিন্তু ফলের উপর নয়”, তাহলে সে অযথা হতাশ হত না।

 তুমি যা করতে পারো, সেটাই করো। ফল কেমন হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা কোরো না।

২. জীবনকে একটি বড় চিত্রের অংশ হিসেবে দেখো (গীতা ১৩.২৮)

আমরা অনেক সময় ছোটখাটো ব্যর্থতাকে জীবনের শেষ বলে ধরে নিই। কিন্তু গীতা বলে, আমরা প্রত্যেকেই একটি বৃহত্তর চিত্রের অংশ। জীবন একদিনের খেলা নয়, এটা অনেক বড় একটা সফর।

আজ যা বড় সমস্যা মনে হচ্ছে, কয়েক বছর পর হয়তো সেটাই হাসির বিষয় হয়ে যাবে। তাই ধৈর্য ধরো।

৩. নিজের অনুভূতিগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখো (গীতা ৬.৫-৬)

গীতা বলে, “নিজেই নিজের বন্ধু, আবার নিজেই নিজের শত্রু।” অনেক সময় আমরা রাগ, দুঃখ, হতাশার কারণে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। গীতা শেখায়, নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করাই প্রকৃত শান্তির চাবিকাঠি।

 খারাপ সময়ে ধৈর্য ধরো, ভালো সময়ে অহংকার করোনা।

৪. আসক্তি ত্যাগ করো, ভারসাম্য বজায় রাখো (গীতা ৫.১০)

গীতায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কর্ম করে কিন্তু তার প্রতি আসক্ত হয় না, সেই প্রকৃত মুক্ত। উদাহরণ হিসেবে, তোমার প্রিয় মোবাইল ফোন ভেঙে গেলে তুমি কি এক মাস দুঃখ করবে? নিশ্চয়ই না। ঠিক তেমনই, জীবনের সব কিছুর প্রতি যদি আমরা অতিরিক্ত আসক্ত না হই, তাহলে দুঃখও কম হবে।

 জীবনকে সহজভাবে নাও। জিনিসের প্রতি নয়, অভিজ্ঞতার প্রতি ভালোবাসা তৈরি করো।

৫. বিশ্বাস রাখো, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে (গীতা ১৮.৬৬)

অনেক সময় আমরা ভবিষ্যত নিয়ে এত বেশি চিন্তা করি যে বর্তমানে বাঁচতেই ভুলে যাই। গীতা বলে, “তুমি আমার শরণাগত হও, আমি তোমার সকল কষ্ট দূর করব।” অর্থাৎ, সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখো, সব ঠিক হয়ে যাবে।

 অপ্রয়োজনীয় দুশ্চিন্তা বন্ধ করো। ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করো, কিন্তু বর্তমানে বাঁচো।

৬. প্রকৃত সুখ বাইরের জিনিসে নেই, নিজের মধ্যে আছে (গীতা ৫.২১)

অনেকেই ভাবে, নতুন ফোন, ভালো চাকরি, বড় গাড়ি পেলেই সুখ আসবে। কিন্তু গীতা বলে, প্রকৃত সুখ বাইরের জিনিসের উপর নির্ভর করে না। নিজের মন যদি শান্ত হয়, তাহলেই প্রকৃত সুখ আসবে।

 বাইরের দুনিয়ার চেয়ে নিজের মনের উপর বেশি গুরুত্ব দাও।

৭. সেবার মাধ্যমে শান্তি খুঁজে নাও (গীতা ৩.২৫)

কোনোদিন খেয়াল করেছ, যখন তুমি কাউকে সাহায্য করো, তখন তোমার নিজের মনেও একটা ভালো অনুভূতি আসে? গীতা বলে, নিঃস্বার্থ সেবাই মানসিক শান্তির অন্যতম উপায়।

 নিজের সমস্যার কথা না ভেবে, অন্যের সমস্যার সমাধানে সাহায্য করো। দেখবে, নিজেই শান্তি পাবে।

শেষ কথা: তোমার শান্তি তোমার হাতেই

জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জের উত্তর গীতায় আছে। কষ্ট আসবেই, কিন্তু সেটাকে কীভাবে নেওয়া হবে, সেটা আমাদের উপর নির্ভর করে। আজ থেকেই চেষ্টা করো, কর্ম করো, ফল নিয়ে চিন্তা কোরো না; মনকে শান্ত রাখো; জীবনের প্রতি ভারসাম্য আনো। দেখবে, তোমার জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *