কাজে মনোযোগ বাড়ানোর ৭টি কৌশল ভগবদ্গীতার নির্দেশ অনুযায়ী

আজকের যুগে আমাদের সবারই একটা কমন সমস্যা – কাজে মনোযোগ দিতে পারি না! সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, বন্ধুরা – কত কিছু মনোযোগ নষ্ট করার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে! কিন্তু কাজের সময় যখন ফোকাস করা দরকার, তখনই যেন মন হাওয়ায় উড়ে যায়।

এই সমস্যার সমাধান কী? উত্তর পাওয়া যায় ভগবদ্গীতায়! গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে শুধু যুদ্ধ জেতার শিক্ষা দেননি, বরং মনোযোগ ধরে রেখে কর্মে সফল হওয়ার গোপন রহস্যও বলে দিয়েছেন।

তাহলে আসুন, ভগবদ্গীতার নির্দেশ অনুযায়ী কাজে মনোযোগ বাড়ানোর ৭টি কৌশল জেনে নিই!

১. ফল নিয়ে চিন্তা নয়, কাজে ফোকাস করো (কর্মযোগ)

গীতা বলে – “কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।” (২.৪৭)

এই শ্লোকের সহজ মানে হলো – কাজ করো, কিন্তু ফল নিয়ে বেশি ভাববে না।

মনোযোগ নষ্ট হওয়ার বড় কারণ হল, আমরা কাজের ফলাফল নিয়ে বেশি চিন্তা করি। পরীক্ষায় কত নম্বর পাব? প্রেজেন্টেশন ভালো হবে তো? এসব চিন্তা করলেই টেনশন বাড়ে, কাজের স্পিড কমে যায়।

 তাই গীতার মতে, শুধু কাজে ফোকাস করো, বাকি যা হওয়ার হবে!

২. মন ঘোরানো বন্ধ করো (ধ্যান যোগ)

গীতা বলে – “যততো হৃষীকেশ মনশ্চঞ্চলমস্থিরম।” (৬.২৬)

মন স্বাভাবিকভাবেই এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াবে, কিন্তু তুমি একে ফিরিয়ে আনবে কাজে।

উদাহরণ: যখন পড়াশোনা করছো, তখন হঠাৎ মনে পড়লো কাল রাতে দেখা ওয়েব সিরিজের কথা। এখন তুমি যদি সেই চিন্তায় ডুবে যাও, তবে পড়ায় মন বসবে না। কিন্তু যদি সাথে সাথে নিজেকে ফেরাও, তাহলে ফোকাস ধরে রাখতে পারবে।

 প্রতিদিন ১০ মিনিট মেডিটেশন করো, দেখবে মনোযোগের উন্নতি হবে!

৩. নিশ্চিত লক্ষ্য ঠিক করো (সাংখ্য যোগ)

গীতা বলে – “বহুশাখা হ্যনন্তশ্চ…ব্যবসায়িনাং ধীমিহি।” (২.৪১)

যার লক্ষ্য পরিষ্কার, তার মনোযোগও দৃঢ়।

তুমি যদি ঠিক না করো কী করতে চাও, তবে ফোকাস হারাবে। একদিন যদি পড়তে বসো, পরদিন যদি গেম খেলতে বসো, তাহলে কোনো কিছুতেই ভালো ফল পাবে না।

একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করো এবং সেটাতে ১০০% মনোযোগ দাও।

৪. বিপদকে ভয় পেও না (ভক্তি যোগ)

গীতা বলে – “মা তুচ্ছিৎ ধর্মং সনাতনম।” (১৮.৬৬)

কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই। পরীক্ষায় খারাপ ফল হতে পারে, কাজের রেজাল্ট ভালো নাও আসতে পারে। কিন্তু তাই বলে চেষ্টা বন্ধ করে দেবে?

উদাহরণ: ক্রিকেটার বিরাট কোহলি যদি একটা ম্যাচে খারাপ খেলে, সে কি খেলা ছেড়ে দেয়? না! সে আবার মনোযোগ দিয়ে অনুশীলন করে।

নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো, পরিশ্রম চালিয়ে যাও!

৫. কাজের সময় শুধু কাজ করো (নিষ্ঠা)

গীতা বলে – “যোগঃ কর্মসু কৌশলম।” (২.৫০)

যখন একটা কাজ করছো, তখন শুধু সেটাই করো। একই সাথে অনেক কিছু করতে গেলে মনোযোগ কমে যায়।

উদাহরণ: পড়াশোনার সময় যদি ফোনে নোটিফিকেশন চেক করো, তবে পড়া পুরোপুরি মনে থাকবে না।

 একবারে একটাই কাজ করো, ১০০% ফোকাস দাও!

৬. নিজেকে অতিরিক্ত চাপে রেখো না (সুখ-দুঃখ সমান ভাবে নেওয়া)

গীতা বলে – “সমদুঃখসুখং ধীরং…।” (২.১৫)

কাজ করতে গিয়ে যদি বেশি চাপ নিয়ে ফেলো, তবে মনোযোগ কমে যাবে। তাই কাজকে উপভোগ করো, দুশ্চিন্তা কোরো না।

উদাহরণ: পরীক্ষার আগে অনেক ছাত্র-ছাত্রী এত টেনশনে থাকে যে, পড়া মনে রাখাই কঠিন হয়ে যায়। অথচ রিল্যাক্স থেকে পড়লে অনেক ভালো মনে থাকে।

 কাজ করো মজা নিয়ে, সফলতা আপনাআপনি আসবে!

৭. শরীর-মন সুস্থ রাখো (সত্ত্বগুণ বাড়াও)

গীতা বলে – “সত্ত্বং সুখে সঞ্জায়তি…।” (১৪.৯)

তিনটি গুণের মধ্যে সত্ত্বগুণ বাড়ালে মনোযোগ ভালো থাকে। আর সত্ত্বগুণ বাড়ানোর উপায় হলো ভালো খাবার খাওয়া, ভালো বই পড়া, ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা।

রাত জেগে মোবাইল না চালিয়ে, পর্যাপ্ত ঘুম নাও, স্বাস্থ্যকর খাবার খাও, শরীরচর্চা করো!

 উপসংহার: মনোযোগ বাড়ানোর জন্য আজ থেকেই শুরু করো!

ভগবদ্গীতার এই শিক্ষা শুধু অর্জুনের জন্য ছিল না, এটা তোমার জীবনেও কাজে লাগবে!

আজ থেকেই এই ৭টি কৌশল ফলো করো: 

  1. কাজের ফল নিয়ে দুশ্চিন্তা বন্ধ করো।
  2. মন অন্যদিকে চলে গেলে ফিরিয়ে আনো।
  3.  নিশ্চিত লক্ষ্য নির্ধারণ করো।
  4.  বাধাকে ভয় না পেয়ে এগিয়ে চলো।
  5. একসাথে একটাই কাজ করো।
  6. কাজকে উপভোগ করো, টেনশন কোরো না।
  7. শরীর ও মন সুস্থ রাখো।

 যদি এগুলো ফলো করো, তাহলে ফোকাস এমনই ধারালো হবে যে, তোমার স্বপ্নের কাজেও সফলতা আসবেই!

হরে কৃষ্ণ! 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top