আজকাল আমাদের জীবন এতটাই ব্যস্ত যে আমরা খুশি থাকার আসল সূত্রটাই ভুলে যাচ্ছি। নতুন ফোন, ভালো চাকরি, নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, এসব পেলেও যেন মনে হয়, কিছু একটা কম পড়ছে! আর সেটা কী? উত্তর খুব সহজ, কৃতজ্ঞতা। ভগবদ্গীতায় (Bhagavad Gita) শ্রীকৃষ্ণ আমাদের শেখান, প্রকৃত সুখ আসে কৃতজ্ঞতা থেকে। কিন্তু কৃতজ্ঞতা বাড়ানো যায় কিভাবে? চল, দেখি গীতার আলোকে পাঁচটি সহজ উপায়।
১. যা আছে, সেটার জন্য ধন্যবাদ জানাও (Bhagavad Gita 2.47)
গীতায় বলা হয়েছে, “কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন”, অর্থাৎ, তুমি শুধু কাজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পার, কিন্তু ফলের উপর নয়।
সমস্যা: আমরা সবসময় যা নেই, সেটার জন্য মন খারাপ করি। ভালো রেজাল্ট পাইনি, নতুন গেম কেনা হলো না, ঘুরতে যাওয়া হলো না, এসব ভেবে হতাশ হই।
সমাধান: প্রতিদিন ঘুমানোর আগে বা সকালে উঠে তিনটি জিনিস লিখে রাখো, যেগুলোর জন্য তুমি কৃতজ্ঞ। যেমন, পরিবার, বন্ধু, ভালো স্বাস্থ্য, পড়াশোনা করার সুযোগ ইত্যাদি। যখন যা পাবে, তার জন্য “ধন্যবাদ” জানাও। ধীরে ধীরে দেখবে, তোমার মন আনন্দে ভরে উঠবে।
২. অহংকার কমাও, বিনম্র হও (Bhagavad Gita 13.8-12)
শ্রীকৃষ্ণ বলেন, “অমানিত্ব্বম্, অদম্ভিত্ব্বম্, অহিংসা, ক্ষমা…”, অর্থাৎ বিনম্র হও, অহংকার ছেড়ে দাও।
সমস্যা: আমরা নিজেদের সব কৃতিত্ব নিজেদের বলে মনে করি, তাই কৃতজ্ঞতা অনুভব করি না। যেমন, পরীক্ষায় ভালো করলে মনে করি, সবটুকু আমার কষ্টের ফল, কিন্তু শিক্ষকের গাইডেন্স, বাবা-মায়ের সাপোর্টের কথা ভুলে যাই।
সমাধান: পরের বার যখন সফল হবে, তখন ভাববে, এই সাফল্যের পেছনে কারা সাহায্য করেছে? ধন্যবাদ জানাও, প্রশংসা করো, এবং বিনয়ী হও। এতে তোমার চারপাশের মানুষও তোমাকে ভালোবাসবে।
৩. নিজের চাহিদা কমাও, সন্তুষ্ট থাকতে শেখো (Bhagavad Gita 6.10-12)
গীতায় বলা হয়েছে, “যোগী সন্তুষ্ট থাকেন এবং বাহ্যিক বস্তুতে আসক্ত হন না।”
সমস্যা: আমরা সবসময় আরও চাই, বড় ফোন, দামি জুতা, আরও টাকা। কিন্তু এভাবে কোনোদিনই সন্তুষ্টি আসে না।
সমাধান: নিজেকে জিজ্ঞেস করো, “আমি যা চাই, সেটা কি সত্যিই দরকার?” শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনো, বাকি টাকা অন্যদের সাহায্যে ব্যয় করো। দেখবে, মনের ভেতর একধরনের প্রশান্তি আসবে।
৪. অন্যকে সাহায্য করো, ভালোবাসা দাও (Bhagavad Gita 3.10-12)
গীতায় বলা হয়েছে, “এই বিশ্ব পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। দান এবং সেবা জীবনের মূল শিক্ষা।”
সমস্যা: আমরা সবকিছু শুধু নিজেদের জন্য চাই, অন্যকে সাহায্য করার কথা ভাবি না। অথচ যখনই কাউকে সাহায্য করি, তখন মনে সত্যিকারের আনন্দ আসে।
সমাধান: প্রতিদিন অন্তত একজনকে সাহায্য করার চেষ্টা করো। হয়তো বন্ধুকে পড়াশোনায় সাহায্য করতে পারো, কেউ বিপদে পড়লে পাশে দাঁড়াতে পারো। যত বেশি দেবে, তত বেশি সুখ পাবে।
৫. বর্তমান মুহূর্তে বাঁচো, ভবিষ্যতের চিন্তা ছাড়ো (Bhagavad Gita 18.66)
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেন, “সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।” অর্থাৎ, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবে দুশ্চিন্তা কোরো না, ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রাখো।
সমস্যা: আমরা সবসময় ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করি, পরীক্ষা কেমন হবে? চাকরি পাব তো? প্রেম সফল হবে তো? ফলে বর্তমানের আনন্দ মাটি হয়ে যায়।
সমাধান: যখনই দুশ্চিন্তা করবে, শ্বাস নাও, নিজেকে বলো, “আমি এখন এই মুহূর্তে আছি, আর এটা সুন্দর। ভবিষ্যৎ ঈশ্বরের হাতে।” মন শান্ত হবে, দুশ্চিন্তা কমবে।
শেষ কথা: ছোট ছোট জিনিসের জন্য ধন্যবাদ জানাও
ভগবদ্গীতা আমাদের শেখায়, কৃতজ্ঞতাই সত্যিকারের সুখের মূল চাবিকাঠি। আমাদের জীবন যেমনই হোক, তাতে অনেক ভালো দিক আছে।
তাহলে আজ থেকে কৃতজ্ঞতার এই পাঁচটি অভ্যাস শুরু করবে তো?
- প্রতিদিন কৃতজ্ঞতার তালিকা বানাও।
- অহংকার ছেড়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানাও।
- কম চাও, বেশি সন্তুষ্ট হও।
- সাহায্য করো, ভালোবাসা দাও। \
- বর্তমান মুহূর্ত উপভোগ করো।
তুমি কৃতজ্ঞ হলে, জীবন তোমাকে আরও বেশি আনন্দ দেবে!