কোন পথে হাঁটবেন? গীতার ৭টি নির্দেশিকা আপনাকে সাহায্য করবে

জীবনে এমন এক সময় আসে যখন আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি। কোন পথে যাব? কোন সিদ্ধান্ত সঠিক? আমরা কনফিউজড হয়ে যাই, একদিকে ক্যারিয়ার, অন্যদিকে সম্পর্কের টানাপোড়েন, সমাজের প্রত্যাশা, নিজের স্বপ্ন, আবার মানসিক শান্তির প্রশ্ন। এমন পরিস্থিতিতে আপনি কী করবেন?

ভাগ্য ভালো, এই প্রশ্নের উত্তর বহু বছর আগেই দেওয়া হয়েছে এক মহাগ্রন্থে,  শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। এটি শুধু ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং জীবনের এক অসাধারণ গাইডবুক। আজ আমরা গীতার সাতটি শক্তিশালী নির্দেশিকা দেখব, যা আপনাকে জীবনের সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করবে।

১. নিজের ধর্ম বা ‘স্বধর্ম’ অনুসরণ করুন

 “শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাত্‌ স্বনুষ্ঠিতাত্‌।” (গীতা ৩.৩৫)

ধরুন, আপনার পরিবার চায় আপনি ইঞ্জিনিয়ার হন, কিন্তু আপনার স্বপ্ন মিউজিক ক্যারিয়ার গড়া। আপনি কি শুধু সমাজের চাপে পড়ে নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দেবেন? গীতা বলে, নিজের প্রকৃতি ও প্রতিভা অনুযায়ী পথ বেছে নেওয়াই শ্রেয়। অন্যের দেখানো পথে হাঁটলে হয়তো সাময়িক লাভ হবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে আপনি সুখী হবেন না।

২. ফল নিয়ে চিন্তা নয়, কাজ করে যান

“কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।” (গীতা ২.৪৭)

পরীক্ষার আগে ভয় পাচ্ছেন? চাকরির ইন্টারভিউ নিয়ে দুশ্চিন্তা? আমরা প্রায়ই এত বেশি ফল নিয়ে ভাবি যে আমাদের কর্মক্ষমতাই কমে যায়। গীতার শিক্ষা হলো, ফল নিয়ে না ভেবে কাজের উপর মনোযোগ দিন। আপনি যদি সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করেন, সঠিকভাবে চেষ্টা করেন, তাহলে ফল একদিন আসবেই।

৩. আসক্তি থেকে মুক্ত থাকুন

“যোগস্থঃ কুরু কর্মাণি সঙ্গং ত্যক্ত্বা ধনঞ্জয়।” (গীতা ২.৪৮)

আমরা প্রায়ই টক্সিক সম্পর্ক, অতীতের ভুল, বা অপ্রয়োজনীয় জিনিসের প্রতি আসক্ত হয়ে যাই। যেমন ধরুন, আপনি একটা সম্পর্কে আছেন যেখানে আপনি সুখী নন, তবুও ছাড়তে পারছেন না! গীতা শেখায়, অপ্রয়োজনীয় আসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে এগিয়ে চলতে হবে। সব কিছুর প্রতি ব্যালান্সড দৃষ্টিভঙ্গি রাখাই আসল চাবিকাঠি।

৪. ভয় ও সন্দেহ থেকে মুক্ত থাকুন

 “সংশয়াত্মা বিনশ্যতি।” (গীতা ৪.৪০)

অনেক সময় আমরা নিজেদের সামর্থ্য নিয়েই সন্দিহান হয়ে যাই। “আমি পারব তো?”, এই প্রশ্ন আপনাকেও কুরে কুরে খায়, তাই না? কিন্তু গীতা বলে, যে ব্যক্তি নিজের উপর সন্দেহ করে, সে কখনোই সাফল্য পাবে না। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন, ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন, এবং নিজেকে প্রমাণ করুন।

৫. রাগকে নিয়ন্ত্রণ করুন

 “ক্রোধাদ্‌ ভবতি সংমোহঃ সংমোহাত্‌ স্মৃতিভ্রংশঃ।” (গীতা ২.৬৩)

কোনো এক বন্ধুর সঙ্গে মনোমালিন্য হলেই কি রেগে যান? কেউ সমালোচনা করলে কি প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছে করে? গীতা বলে, রাগ বুদ্ধিকে নষ্ট করে দেয়। রাগের মুহূর্তে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। বরং, শান্ত হয়ে ভাবুন, সময় নিন, তারপর প্রতিক্রিয়া জানান।

৬. মানসিক শান্তির জন্য ‘ধ্যান’ ও আত্মচিন্তা করুন

 “অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেণ চ গৃহ্যতে।” (গীতা ৬.৩৫)

আজকের সময়ে আমাদের মন সবসময় অশান্ত থাকে, সোশ্যাল মিডিয়ার ওভারলোড, অনবরত স্ক্রলিং, নেগেটিভ নিউজ, এসব আমাদের মানসিক শান্তি নষ্ট করছে। গীতা বলে, নিয়মিত ধ্যান (মেডিটেশন) ও আত্মচিন্তার মাধ্যমে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। দিনে অন্তত ১০ মিনিট ধ্যান করুন এবং দেখুন কীভাবে আপনার মানসিক শক্তি বাড়ে।

৭. প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের পথে থাকুন

 “তদ্বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া।” (গীতা ৪.৩৪)

এখনকার যুগে আমরা অনেক কিছু জানি, কিন্তু সত্যিকারের জ্ঞান খুব কম মানুষের আছে। গীতা বলে, জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সংস্পর্শে থাকুন, বই পড়ুন, শেখার আগ্রহ রাখুন। ইউটিউবে না দেখে, সত্যিকারের দক্ষতা অর্জন করুন। জীবনে উন্নতি করতে হলে শেখার ইচ্ছা কখনোই হারাবেন না।

উপসংহার: এখন কোন পথে হাঁটবেন?

আপনার সামনে দুটো পথ আছে, একটা সহজ, যেখানে অন্যের দেখানো পথে চলতে হবে, আরেকটা কঠিন, যেখানে আপনাকে নিজের আত্মা ও বিবেকের কথা শুনতে হবে। গীতার শিক্ষা অনুযায়ী, নিজের সঠিক পথ খুঁজে নিয়ে, ধৈর্য ধরে, ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে, নিরলসভাবে এগিয়ে চলাই সফলতার আসল সূত্র

 অ্যাকশন স্টেপ:
প্রতিদিন ১০ মিনিট ধ্যান করুন
নিজের লক্ষ্যের দিকে ফোকাস করুন, অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না
যেকোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, এটি কি আমার প্রকৃত স্বধর্মের সঙ্গে মেলে?
ভয় ও সন্দেহ ঝেড়ে ফেলে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন
আজ থেকেই গীতার অন্তত একটি শ্লোক পড়া শুরু করুন!

জীবন এক বিশাল যাত্রা, আর গীতা সেই যাত্রার মানচিত্র। তাই নিজের পথ নিজেই বেছে নিন, কারণ আপনার ভবিষ্যৎ কেবল আপনারই হাতে!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top