আপনার কি সকালে বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে না? পড়াশোনা বা কাজের চিন্তা মনে এলেই কি আর মন বসে না? চিন্তা করবেন না, এই সমস্যাটা আমাদের অনেকেরই। তবে ভাগ্য ভালো, এর একটা সমাধান আছে। এবং সমাধানটা এসেছে আমাদের মহান ধর্মগ্রন্থ ভগবদ গীতা থেকে। গীতার মধ্যে এমন কিছু উপদেশ রয়েছে, যা যদি ঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অলসতার শিকল ছিঁড়ে ফেলা খুবই সম্ভব।
চলুন, দেখে নিই গীতার ৬টি কার্যকরী কৌশল যা আপনার জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
১. কর্মযোগ: কাজেই প্রকৃত আনন্দ
গীতায় কৃষ্ণ বলেছেন:
“যোগঃ কর্মসু कौशलम्।”
অর্থাৎ, কাজের মধ্যেই যোগ বা সার্থকতা। অলসতার বড় কারণ হলো, কাজকে চাপ হিসেবে দেখা। কিন্তু যদি আমরা কাজকে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে দেখি, তবে সেটা আর বোরিং মনে হবে না।
কীভাবে কাজে লাগাবেন?
- পড়াশোনাকে শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, জ্ঞান বাড়ানোর জন্য করুন।
- অফিসের কাজকে বেতন পাওয়ার উপায় নয়, দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ মনে করুন।
যেমন, কেউ যদি গান শিখতে চায়, সে শুরুতে কঠিন মনে করলেও অনুশীলনের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পাবে।
২. স্বধর্ম পালন: নিজের কাজকেই শ্রেষ্ঠ মনে করা
গীতায় বলা হয়েছে:
“শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাত্ স্বনুষ্টিতাত্।”
অর্থাৎ, অন্যের কাজ দেখে প্রভাবিত না হয়ে নিজের কর্তব্য পালনই শ্রেষ্ঠ। আমরা প্রায়ই অন্যদের সফলতা দেখে নিজেকে ছোট ভাবি এবং কাজ ফেলে দেই। এই তুলনা আমাদের অলস করে তোলে।
কীভাবে কাজে লাগাবেন?
- সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের জীবন দেখে হীনমন্যতায় না ভুগে নিজের ছোট ছোট সাফল্য উদযাপন করুন।
- আপনার পড়াশোনা বা কাজ যেটাই হোক, সেটাকে নিজের মতো করে সুন্দর করে তুলুন।
৩. মনের উপর নিয়ন্ত্রণ: স্থিতপ্রজ্ঞ হওয়া
কৃষ্ণ বলেছেন:
“যঃ সর্বত্রানভিস্নেহস্তত্তত্তপ্রাপ্য শুভাশুভম।”
যে মানুষ নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে কখনোই অলস হবে না। আমাদের অলসতার পিছনে বড় কারণ হলো মনের অস্থিরতা। আমরা সবসময় নতুন কিছু করার কথা ভাবি, কিন্তু বাস্তবে কিছুই করি না।
কীভাবে কাজে লাগাবেন?
- মেডিটেশন করুন। প্রতিদিন ১০ মিনিট ধ্যান করলে মন অনেক শান্ত হবে।
- একটি কাজ একবার শুরু করলে সেটি শেষ না করা পর্যন্ত ফোকাস রাখুন।
৪. আত্মবিশ্বাস: আমি পারব
গীতায় উল্লেখ রয়েছে যে,
“উদ্ধরেৎ আত্মনাআত্মানং।”
অর্থাৎ, নিজেকে নিজের সাহায্য করতে হবে। অনেক সময় আমরা ভাবি, “আমি এটা পারব না,” আর সেই ভাবনা থেকেই কাজ ফেলে রাখি। কিন্তু নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখলে সেই কাজই সহজ হয়ে যায়।
কীভাবে কাজে লাগাবেন?
- বড় কাজকে ছোট ছোট ধাপে ভাগ করুন। প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হলে নিজেকে প্রশংসা করুন।
- যদি কোনো কাজে ব্যর্থ হন, তবে সেটাকে শিক্ষা হিসেবে নিন।
যেমন, পরীক্ষা ভালো না দিলে পরের বার কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন, সেটার উপর ফোকাস করুন।
৫. সংযম: ইন্দ্রিয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ
গীতায় বলা হয়েছে:
“যো হি সর্বাণি কর্মাণি সংন্যস্যাধ্যাত্মচেতসা।”
অর্থাৎ, যিনি নিজের ইন্দ্রিয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তিনিই প্রকৃত সুখী। আমরা প্রায়ই ফোন বা টিভিতে সময় নষ্ট করি, যা আমাদের অলসতার প্রধান উৎস।
কীভাবে কাজে লাগাবেন?
- কাজের সময় ফোনকে দূরে রাখুন।
- নিজের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে বিনোদন রাখুন, কিন্তু সেটার বাইরে অতিরিক্ত সময় নষ্ট করবেন না।
৬. নিষ্কাম কর্ম: ফলের আশা ছেড়ে কাজ করুন
গীতার অন্যতম বিখ্যাত শ্লোক:
“কর্মণ্যেবাদিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।”
অর্থাৎ, কাজ করুন, কিন্তু তার ফলের প্রতি আসক্ত হবেন না। আমরা অনেক সময় কাজ শুরুই করি না, কারণ ফল নিয়ে চিন্তায় থাকি। কিন্তু যদি কাজটাই ভালো করে করা যায়, ফল তো এমনিতেই আসবে।
কীভাবে কাজে লাগাবেন?
- আপনার কাজের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলুন। ফল আসুক বা না আসুক, কাজটাই উপভোগ করুন।
- পড়াশোনা বা কাজের শেষে নিজেকে একটি ছোট পুরস্কার দিন, যাতে উৎসাহ বাড়ে।
আপনার জীবন, আপনার নিয়ন্ত্রণ
ভগবদ গীতার এই শিক্ষা শুধু পুরোনো সময়ের জন্য নয়, আজকের যুগেও সমান কার্যকর। অলসতা কাটানো একদিনে সম্ভব নয়, কিন্তু ধীরে ধীরে এই কৌশলগুলো বাস্তবায়ন করলে আপনার জীবনে বদল আনতে পারবেন।
তাহলে, আজ থেকেই শুরু করুন। যে কাজ আপনার সামনে পড়ে আছে, সেটি আজই করুন। মনে রাখবেন, গীতার মতো পথপ্রদর্শক সঙ্গে থাকলে আপনি কোনো কাজে পিছিয়ে পড়বেন না।
“জয় শ্রী কৃষ্ণ।”