ধর্মীয় বিভ্রান্তি দূর করার জন্য গীতার ৬টি দিকনির্দেশনা

ধর্ম নিয়ে বিভ্রান্তি নতুন কিছু নয়! অনেকেই বলে, “আমি ধর্ম বুঝি না”, “গীতা এত কঠিন কেন?” বা “ধর্ম মানেই কি শুধু কঠোর নিয়ম-কানুন?”, এসব প্রশ্ন আমাদের তরুণ সমাজে খুবই সাধারণ। কিন্তু সত্যি কথা হলো, ভগবদ গীতা কোনো কঠিন গ্রন্থ নয়, বরং এটি আমাদের জীবনকে সহজ ও সুন্দর করার জন্যই রচিত হয়েছে। আজ আমরা এমন ৬টি গীতার নির্দেশনা দেখব, যা ধর্মীয় বিভ্রান্তি দূর করে আমাদের সঠিক পথে চলতে সাহায্য করবে।

১. ধর্ম মানেই অন্ধ বিশ্বাস নয়, এটি আত্ম-অনুসন্ধান

অনেক সময় আমরা ভাবি ধর্ম মানেই চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা। কিন্তু গীতা বলে উল্টো কথা! শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন:

“বুদ্ধিযুক্তো জহাতীহ উভয়ে সুখদুঃখে দেহিনঃ। তস্মাদ্ যোগায় যুজ্যস্ব যোগঃ কর্মসূ কৌশলম্।।” (গীতা ২.৫০)

অর্থাৎ, সঠিক জ্ঞান দিয়ে কাজ করাই আসল ধর্ম। তাই অন্ধবিশ্বাস নয়, বরং যুক্তিবাদী ও জ্ঞানমনস্ক হয়ে ধর্মকে বুঝতে হবে। যেমন ধরো, তুমি যদি পরীক্ষায় ভালো করতে চাও, তাহলে শুধু “আমি পাশ করব” বলে বসে থাকলে হবে না, পরিশ্রমও করতে হবে!

২. নিজের ধর্ম পালন করাই শ্রেয়

গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন:

“শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ। স্বধর্মে निधनং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ।।” (গীতা ৩.৩৫)

অর্থাৎ, নিজের ধর্ম মেনে চলাই উত্তম, অন্যের ধর্ম অনুকরণ করা বিপজ্জনক। আমরা অনেক সময় অন্যের লাইফস্টাইল দেখে প্রভাবিত হই, অথচ নিজেদের পথ ভুলে যাই। যেমন কেউ যদি তার বন্ধুর দেখাদেখি ভুল পথে চলে, তাহলে সে নিজের স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে। তাই নিজের আত্মাকে বোঝা ও নিজের ধর্মকে গ্রহণ করাই শ্রেয়।

৩. কর্ম করো, ফলের চিন্তা কোরো না

এটা গীতার সবচেয়ে বিখ্যাত উপদেশ:

“কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।” (গীতা ২.৪৭)

অর্থাৎ, তুমি শুধু কাজ করো, ফলের চিন্তা করো না। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা যেকোনো কিছু পোস্ট করার পরই লাইক-কমেন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তা করি। অথচ যদি আমরা কাজটাকে ভালোবেসে করি, তাহলে ওই লাইক-কমেন্ট নিয়ে ভাবতে হবে না! সাফল্য এমনিতেই আসবে।

৪. সংসার ছেড়ে পালানো নয়, ধর্ম মানে দায়িত্ব পালন

অনেকেই ভাবে যে গীতা মানে সবকিছু ছেড়ে সন্ন্যাসী হওয়া! কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধ থেকে পালাতে বলেননি, বরং দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন।

“সর্বভূতহিতে রতা:” (গীতা ৫.২৫)

অর্থাৎ, প্রকৃত ধর্ম হলো সকলের মঙ্গলের জন্য কাজ করা। তুমি যদি ছাত্র হও, তবে তোমার ধর্ম ভালো পড়াশোনা করা। তুমি যদি চাকরিজীবী হও, তবে সততার সঙ্গে কাজ করা।

৫. আসক্তি নয়, সমতা বজায় রাখো

আমরা অনেক সময় কিছু জিনিসের প্রতি এত আসক্ত হয়ে পড়ি যে সেটা আমাদের ক্ষতি করে। গীতা বলে:

“সমত্বং যোগ উচ্যতে” (গীতা ২.৪৮)

অর্থাৎ, সুখে দুঃখে সমান থাকা উচিত। ধরো, তুমি কোনো পরীক্ষায় ফেল করেছ। এতে ভেঙে পড়ার কিছু নেই, আবার পাশ করলেও অহংকার করার কিছু নেই। জীবন চলার পথেই সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করাই ধর্ম।

৬. ভক্তি মানে শুধুই উপাসনা নয়, প্রকৃত জ্ঞান লাভ

অনেকে ভাবে ধর্ম মানে শুধু মন্দিরে যাওয়া বা পুজো করা। কিন্তু গীতা বলে:

“বাহ্যস্পর্শেষ্বসক্তাত্মা বিন্দত্যাত্মনি যৎ সুখম্।” (গীতা ৫.২১)

অর্থাৎ, প্রকৃত সুখ বাহ্যিক নয়, এটি অন্তরে পাওয়া যায়। ধর্ম মানে শুধু রীতিনীতি নয়, বরং সত্য, ন্যায় ও প্রেমের পথে চলা।

শেষ কথা: ধর্ম মানে মুক্তি, শৃঙ্খল নয়!

তরুণ সমাজের জন্য গীতার শিক্ষা হলো, ধর্ম মানে কোনো চাপ নয়, বরং সত্যের পথে চলার আনন্দ। বিভ্রান্তি দূর করতে হলে গীতাকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে।

  •  যুক্তিবাদী হও 
  •  নিজের পথ খুঁজে নাও 
  • কর্মে বিশ্বাস করো 
  •  দায়িত্ব পালন করো 
  •  আসক্তি ছেড়ে দাও 
  •  প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করো

এই সহজ ৬টি উপদেশ মানলেই ধর্ম নিয়ে আর কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না। বরং জীবন হয়ে উঠবে সুন্দর, সহজ এবং সার্থক!

“তোমার ধর্মই তোমার শক্তি!”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top