আজকের তরুণ প্রজন্মের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা। সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার, পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে অসুবিধা, এবং ব্যক্তিগত লক্ষ্যগুলোর প্রতি অনীহা , এসব সমস্যা কমবেশি সবাই অনুভব করি।
তবে আশার কথা হলো, হাজার বছর আগেই এই সমস্যার সমাধানের সূত্র বলে গিয়েছেন শ্রীকৃষ্ণ, ভগবদ্ গীতায়। গীতার শিক্ষাগুলো সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সব যুগেই প্রাসঙ্গিক। আজ আমরা শিখব গীতার ৫টি সিক্রেট টিপস, যা তোমাকে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে সাহায্য করবে।
১. “শ্রদ্ধাবান লাভতে জ্ঞানম্” , লক্ষ্য স্থির করো
গীতায় বলা হয়েছে: “শ্রদ্ধাবান লাভতে জ্ঞানম্”, অর্থাৎ একাগ্রতা এবং বিশ্বাসই প্রকৃত জ্ঞানের চাবিকাঠি। জীবনের কোনো লক্ষ্য ছাড়াই যদি চলতে থাকো, তাহলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
কীভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবে?
- পড়াশোনা বা ক্যারিয়ারে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করো।
- দৈনন্দিন কাজের একটি তালিকা তৈরি করো এবং সেটাকে মেনে চলার চেষ্টা করো।
- লক্ষ্য অর্জনের পথে ধাপে ধাপে অগ্রসর হও।
উদাহরণ: ধরা যাক তুমি একজন প্রোগ্রামার হতে চাও। তাহলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে কোডিং শেখো, ছোট ছোট প্রজেক্ট তৈরি করো, এবং ক্রমাগত শেখার অভ্যাস গড়ে তোলো।
২. “যোগহঃ কর্মসু কৌশলম্” , কাজকে উপাসনা হিসেবে নাও
ভগবদ্ গীতায় বলা হয়েছে: “যোগহঃ কর্মসু কৌশলম্”, অর্থাৎ কাজের মধ্যে দক্ষতা অর্জনই প্রকৃত যোগ। আজকের তরুণ সমাজের মধ্যে প্রোক্রাস্টিনেশন বা কাজে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা প্রচুর। কিন্তু যদি কাজকে ইবাদত বা উপাসনা হিসেবে নাও, তাহলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।
কীভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবে?
- প্রতিদিন ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করো এবং কাজগুলো মনোযোগ দিয়ে সম্পন্ন করো।
- কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রাখো এবং ধৈর্য ধরো।
- নিজের উন্নতির জন্য প্রতিদিন আত্মমূল্যায়ন করো।
উদাহরণ: যদি তুমি শরীর ফিট রাখতে চাও, তবে এটি “বাধ্যতামূলক এক্সারসাইজ” না ভেবে “নিজের প্রতি যত্ন” হিসেবে দেখো।
৩. “সমত্বং যোগ উচ্যতে” , পরিস্থিতি অনুযায়ী মানিয়ে নাও
জীবনে সুখ-দুঃখ আসবেই, কিন্তু গীতায় শেখানো হয়েছে: “সমত্বং যোগ উচ্যতে”, অর্থাৎ জীবনের উত্থান-পতনে সমান থাকার নামই প্রকৃত যোগ। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হলে কঠিন পরিস্থিতিগুলোর সামনে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে।
কীভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবে?
- যে কোনো কঠিন অবস্থাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করো।
- হতাশ হলে শ্বাস নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করো।
- সামাজিক চাপ বা নেতিবাচক মন্তব্যকে পাত্তা না দিয়ে নিজের লক্ষ্য বজায় রাখো।
উদাহরণ: পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হলে হতাশ না হয়ে কোথায় ভুল হয়েছে তা খুঁজে বের করো এবং পরবর্তী পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নাও।
৪. “আত্মসংযমেন” , নিজের ইচ্ছেগুলো নিয়ন্ত্রণ করো
গীতা আমাদের শেখায়: “আত্মসংযমেন”, অর্থাৎ প্রকৃত শক্তিশালী সেই ব্যক্তি যে নিজের আবেগ এবং ইচ্ছেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
কীভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবে?
- অপ্রয়োজনীয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার কমিয়ে ফোকাস বাড়াও।
- ডোপামিন ডিটক্সের মাধ্যমে নিজের ইচ্ছাশক্তি বাড়াও।
- রাতে দেরি করে না জেগে ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলো।
উদাহরণ: সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় না করে সেটাকে নির্দিষ্ট সময়ে সীমাবদ্ধ রাখো, যাতে পড়াশোনায় বা নিজের দক্ষতা উন্নয়নে মনোযোগ দিতে পারো।
৫. “ন কাংক্ষতি ন দ্বেষটি” , তুলনা করা বন্ধ করো
গীতায় বলা হয়েছে: “ন কাংক্ষতি ন দ্বেষটি”, অর্থাৎ অন্যদের সাথে নিজের তুলনা না করে নিজের উপর মনোযোগ দাও। অন্যদের জীবনের সাথে তুলনা করলে আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলো।
কীভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবে?
- নিজের উন্নতির জন্য কাজ করো, অন্যদের অর্জনকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নাও।
- সোশ্যাল মিডিয়ার কৃত্রিম জীবন দেখে নিজেকে দুঃখী মনে করো না।
- ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাও।
উদাহরণ: বন্ধুরা কেউ ভালো চাকরি পেয়ে গেলে হতাশ না হয়ে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দাও।
গীতার পথ ধরে সফলতার পথে
নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ আনা কোনো একদিনের কাজ নয়, বরং এটি প্রতিদিনের অনুশীলন। ভগবদ্ গীতার এই ৫টি সিক্রেট টিপস অনুসরণ করলে ধাপে ধাপে তুমি নিজের ইচ্ছাশক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়াতে পারবে।
আজ থেকেই শুরু করো , ছোট ছোট পদক্ষেপ নাও এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজের লক্ষ্য পূরণ করো।
“নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাই প্রকৃত শক্তি।” , গীতার এই বাণী মাথায় রেখো, এবং তোমার জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নাও!