নিজের ভেতরের শান্তি খুঁজে পাওয়ার ৫টি উপায় ভগবদ্গীতার আলোকে

পরীক্ষার চাপ, ক্যারিয়ারের চিন্তা, ব্রেকআপের কষ্ট, এ সবকিছু মিলিয়েই জীবন একটা অগোছালো জগাখিচুড়ি মনে হয়। তোমারও কি কখনো মনে হয়, “ইশ! যদি একটু শান্তি পেতাম?” হ্যাঁ, আমরা সবাই চাই সেই মানসিক শান্তি, কিন্তু খুঁজে পাই না।

ভগবদ্গীতা কিন্তু এই সমস্যার সমাধান আগেই দিয়ে রেখেছে! শ্রীকৃষ্ণের অমূল্য জ্ঞান আমাদের শেখায় কিভাবে নিজের ভেতরের শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। চল, দেখে নেওয়া যাক সেই ৫টি উপায়!

১. নিজের কর্তব্য ঠিকমতো পালন করো, কিন্তু ফল নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না (কর্মযোগ)

 গীতা বলে: “কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।” (ভগবদ্গীতা ২.৪৭)

এটা মানে কী? শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, তুমি শুধু তোমার কাজ করো, কিন্তু তার ফল কী হবে, তা নিয়ে বেশি ভাবনা-চিন্তা কোরো না। ধরো, তুমি পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করছো। তোমার কাজ হলো মন দিয়ে পড়া, কিন্তু “ফার্স্ট হতে পারব তো?”, “মার্কস কম পেলে কী হবে?”, এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে মানসিক শান্তি চলে যাবে। বরং একাগ্রচিত্তে চেষ্টা করো, দেখবে মনের উপর চাপ অনেক কমে গেছে।

২. ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ করো, মোহে পড়ো না (ধ্যান ও আত্মসংযম)

 গীতা বলে: “যঃ হি সর্বত্রানভিস্নেহস্তত্তত্তপ্রাপ্য শুভাশুভম।” (ভগবদ্গীতা ২.৫৭)

আমরা অনেক সময় বাইরের জিনিসের প্রতি এতটাই আসক্ত হয়ে পড়ি যে, তার উপর নির্ভরশীল হয়ে যাই। উদাহরণস্বরূপ, সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ তোমার পোস্টে লাইক দিল না, ব্যাস! তোমার মন খারাপ হয়ে গেল। অথচ এগুলো সাময়িক জিনিস। যদি তুমি নিজের ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারো, তাহলে বাইরের ঘটনা তোমার মানসিক শান্তি নষ্ট করতে পারবে না।

শ্রীকৃষ্ণ বলেন, সুখ বা দুঃখ আসতেই থাকবে, কিন্তু সত্যিকারের জ্ঞানী ব্যক্তি কখনো এতে প্রভাবিত হয় না। কাজেই, মোহ কমাও, সোশ্যাল মিডিয়া বা বাইরের ঘটনাগুলোকে নিজের শান্তি নষ্ট করতে দিও না।

৩. ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখো ও আত্মসমর্পণ করো (ভক্তিযোগ)

গীতা বলে: “সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।” (ভগবদ্গীতা ১৮.৬৬)

কখনো কি মনে হয়েছে, “সব কিছু আমার হাতে নেই!”? ঠিক তাই, অনেক কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আর তাই, ভগবান কৃষ্ণ আমাদের শেখান, তাঁর উপর ভরসা করতে।

ধরো, তুমি অনেক চেষ্টা করেও চাকরির ইন্টারভিউতে সিলেক্ট হতে পারছো না। এতে হতাশ হয়ে নিজেকে দোষারোপ করার কিছু নেই। বরং ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখো এবং ভাবো, “আমার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।” আত্মসমর্পণ মানেই হাল ছেড়ে দেওয়া নয়, বরং ধৈর্য ধরে এগিয়ে যাওয়া।

৪. অহংকার ত্যাগ করো, বিনয়ী হও (জ্ঞানযোগ)

 গীতা বলে: “বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি।” (ভগবদ্গীতা ৫.১৮)

কখনো দেখেছো, কিছু লোক প্রচুর টাকা বা জ্ঞান অর্জন করেও শান্তি পায় না? কারণ, তারা অহংকারে ডুবে থাকে। অহংকার মানুষকে সবসময় অস্থির করে রাখে, কারণ সে ভাবতে থাকে, “আমি সবার চেয়ে বড়!” কিন্তু বিনয়ী ব্যক্তিরা সুখী হয় কারণ তারা অহংকারের বোঝা বহন করে না।

তাই যদি সত্যিকারের শান্তি পেতে চাও, তাহলে অহংকার ছেড়ে দাও, বিনয়ী হও, আর শেখার মানসিকতা রাখো।

৫. বর্তমান মুহূর্তে বাঁচো, অতীত-ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করোনা (সমত্ব ও স্থিতপ্রজ্ঞা)

 গীতা বলে: “সমদুঃখসুখং ধীরং সঃ অমৃতত্বায় কল্পতে।” (ভগবদ্গীতা ২.১৫)

আমরা বেশিরভাগ সময় হয় অতীতের ভুল নিয়ে আফসোস করি, নয়তো ভবিষ্যতের চিন্তায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকি। ফলে, বর্তমান মুহূর্তের আনন্দ আমরা উপভোগ করতে পারি না।

শ্রীকৃষ্ণ বলেন, সুখ-দুঃখ আসবে, কিন্তু যা চলে গেছে বা যা এখনো আসেনি, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা বৃথা। তুমি এখন কী করছো, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করো এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অহেতুক চিন্তা বাদ দাও।

শেষ কথা: শান্তির সন্ধান তোমার হাতেই!

ভগবদ্গীতার শিক্ষা শুধু প্রাচীন জ্ঞান নয়, এটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্যও দারুণ কার্যকর। তুমি যদি সত্যিকারের মানসিক শান্তি পেতে চাও, তাহলে:

  1.  নিজের কাজ করো, কিন্তু ফল নিয়ে দুশ্চিন্তা করোনা। 
  2.  ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ করো, বাহ্যিক জিনিসের উপর নির্ভরশীল হয়ো না। 
  3.  ভগবানের উপর ভরসা রাখো, সব কিছু তোমার হাতে নেই। 
  4.  অহংকার ত্যাগ করে বিনয়ী হও। 
  5.  বর্তমান মুহূর্তে বাঁচো, অতীত-ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করোনা।

এই শিক্ষাগুলো তোমার জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারলে, তুমি শুধু শান্তি নয়, আনন্দও অনুভব করবে! তাই আজ থেকেই চেষ্টা শুরু করো। তোমার শান্তির চাবিকাঠি কিন্তু তোমার হাতেই! 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top