পরিবারের সাথে ঝগড়া এড়ানোর ৯টি সহজ পন্থা ভগবদ্গীতার শিক্ষা থেকে

পরিবারের মধ্যে ঝগড়া হওয়া একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার। বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়, সবাই মনের কথা সবসময় মেলাতে পারে না, তাই মাঝে মাঝে মনোমালিন্য হবেই। কিন্তু সমস্যা তখনই হয় যখন এগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

ভগবদ্গীতা শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক গ্রন্থ নয়, এটি জীবনের নানা সমস্যার সমাধানেরও এক অসাধারণ নির্দেশিকা। আজ আমরা গীতার আলোকে ৯টি সহজ উপায় দেখবো, যা তোমার পরিবারে শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

১. রাগ নিয়ন্ত্রণ করো (গীতা ২.৬৩)

গীতায় বলা হয়েছে, ‘রাগ থেকে মোহ জন্মায়, মোহ থেকে বিভ্রান্তি, বিভ্রান্তি থেকে বুদ্ধির অপনতি, আর বুদ্ধির অপনতি মানেই সর্বনাশ!’ তাই রাগের সময় চুপ থাকা এবং ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা খুবই জরুরি।

কী করো?

  • রাগ উঠলে ১০ সেকেন্ড গুনো এবং গভীর শ্বাস নাও।
  • তৎক্ষণাৎ কোনো কঠিন কথা বলার আগে নিজেকে প্রশ্ন করো, ‘এতে সমস্যা সমাধান হবে, নাকি আরও বাড়বে?’

২. অহংকার ছেড়ে দাও (গীতা ১৬.৩)

ঝগড়ার বড় কারণ হল ‘আমি ঠিক, তুমি ভুল’ এই মানসিকতা। গীতায় বলা হয়েছে, নম্রতা ও বিনয়ী মনোভাব জীবনকে সহজ করে তোলে।

কী করো?

  • ‘আমি সব জানি’ এই ভাবনা বাদ দাও।
  • পরিবারের ছোটদের সাথে বন্ধুদের মতো ব্যবহার করো এবং বড়দের অভিজ্ঞতাকে সম্মান দাও।

৩. সংযম শেখো (গীতা ৬.৫)

নিজেকে সংযত রাখার শিক্ষা গীতা বারবার দিয়েছে। নিজের আবেগকে ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা শিখলে অনেক সমস্যা সহজেই মিটে যায়।

কী করো?

  • অপ্রয়োজনীয় ঝগড়া এড়িয়ে চলো।
  • রাগের সময় কথা না বলে পরে আলোচনা করো।

৪. ত্যাগের মানসিকতা গড়ে তোলো (গীতা ৩.১৯)

পরিবারের শান্তির জন্য অনেক সময় ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্য কাজ করলে সমস্যা বাড়বে।

কী করো?

  • মাঝে মাঝে নিজের মত ছেড়ে অন্যদের কথাও শুনো।
  • আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে পরিবারের ভালোর জন্য ভাবো।

৫. সহানুভূতিশীল হও (গীতা ১২.১৩-১৪)

গীতায় বলা হয়েছে, ‘যে অন্যের প্রতি দয়ালু, সে প্রকৃত ভক্ত।’ পরিবারের সদস্যদের প্রতি দয়ালু এবং সহানুভূতিশীল হও।

কী করো?

  • কারো মনের কষ্ট বোঝার চেষ্টা করো।
  • হঠাৎ রেগে যাওয়ার আগে ভেবে দেখো, তারা কেন এমন আচরণ করছে।

৬. নিজের কর্তব্য পালন করো (গীতা ৩.৩৫)

ঝগড়া কমানোর জন্য প্রত্যেককে নিজের নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে।

কী করো?

  • ঘরের কাজ ভাগ করে নাও।
  • অন্যের ওপর দোষ চাপানো বন্ধ করো।

৭. ন্যায়বিচার বজায় রাখো (গীতা ৫.১৮)

গীতায় বলা হয়েছে, ‘একজন বিদ্বান ব্যক্তি সকলের মধ্যে সমানত্ব খুঁজে পান।’ তাই সঠিক বিচার করতে শেখো।

কী করো?

  • কোনো সিদ্ধান্ত নেবার আগে দুই দিক থেকেই ভাবো।
  • কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব কোরো না।

৮. ধৈর্য ধরো (গীতা ২.১৪)

ঝগড়া হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী করা উচিত নয়। ধৈর্য ধরার শক্তি অর্জন করাই হলো প্রকৃত বীরত্ব।

কী করো?

  • ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বেশি ভাবনা কোরো না।
  • পরিবারের কারো সাথে ঝগড়া হলে, পরে ঠান্ডা মাথায় কথা বলো।

৯. ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখো (গীতা ১৮.৬৬)

সর্বশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জীবনের সব সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রাখো।

কী করো?

  • প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট ধ্যান করো।
  • পরিবারে একসাথে প্রার্থনার ব্যবস্থা করো।

উপসংহার: ভালোবাসাই একমাত্র পথ

গীতার শিক্ষা অনুযায়ী, পারিবারিক জীবনে সুখের মূলমন্ত্র হলো ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং ত্যাগ। ঝগড়া কখনো পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না, কিন্তু এই শিক্ষা কাজে লাগালে সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।

তাই পরের বার যখন পরিবারে ঝগড়া হবে, তখন একটু থামো, ভাবো, এবং গীতার শিক্ষাগুলো কাজে লাগাও। দেখবে, সম্পর্ক আরও সুন্দর হয়ে উঠবে!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top