প্রেম! এক অপূর্ব অনুভূতি, তাই না? কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে যখন ভুল বোঝাবুঝি, হতাশা বা অভিমান চলে আসে, তখন কী করা উচিত? ভগবদ গীতা শুধু যুদ্ধক্ষেত্রের নির্দেশিকা নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সম্পর্কগুলোর জন্যও দারুণ শিক্ষা দেয়। চলো দেখি গীতার কিছু মূল্যবান উপদেশ, যা প্রেমের সম্পর্কে বোঝাপড়া বাড়াতে সাহায্য করবে।
১. নিজেকে আগে বোঝো, তারপর অন্যকে বুঝতে শেখো
গীতার ৬.৫ অধ্যায়ে বলা হয়েছে:
“উদ্ধরেদ্ আত্মনাআত্মানং নাত্মানমবসাদয়েত্।”
(নিজেকে উন্নত করো, নিজের মনকে নিচে নামিও না।)
প্রেমের সম্পর্কে আমরা প্রায়ই অন্যের দোষ খুঁজি, কিন্তু নিজেদের ভুলগুলো দেখা হয় না। কোনো ঝগড়ার পর কি তোমার মনে হয়, “ও সব দোষ করে! আমি কিছুই করিনি!” যদি হয়, তাহলে ভাবো, তুমিও কি কোনো ভুল করছ না? প্রথমে নিজের আচরণ বিশ্লেষণ করো, তারপর সম্পর্কের উন্নতির চেষ্টা করো।
করণীয়: নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখো। আগে নিজেকে বোঝো, তারপর সঙ্গীর অনুভূতিকে গুরুত্ব দাও।
২. আসক্তি নয়, ভালোবাসো নিঃস্বার্থভাবে
গীতার ২.৪৭ শ্লোকে বলা হয়েছে:
“কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।”
(তোমার কাজ করো, কিন্তু ফলের আশা করো না।)
অনেক সময় আমরা সম্পর্ক থেকে শুধু পাওয়ার প্রত্যাশা করি, বেশি ভালোবাসা, বেশি যত্ন, বেশি মনোযোগ! কিন্তু নিঃস্বার্থ প্রেমই হলো সত্যিকারের প্রেম। নিজের চাওয়ার দিকে কম মনোযোগ দিয়ে যদি সঙ্গীর ভালো থাকার চেষ্টা করো, তাহলে সম্পর্ক অনেক মধুর হয়ে উঠবে।
করণীয়: সম্পর্ক থেকে বেশি কিছু প্রত্যাশা না করে, কীভাবে সঙ্গীকে সুখী করা যায় সেটার দিকে মনোযোগ দাও। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা সম্পর্ককে গভীর করে।
৩. রাগ নিয়ন্ত্রণ করো, ধৈর্য ধরো
গীতার ২.৬৩ শ্লোকে বলা হয়েছে:
“ক্রোধাদ্ভবতি সংমোহঃ সংমোহাৎ স্মৃতি বিভ্রমঃ।”
(রাগ থেকে মোহ, মোহ থেকে বিবেকহীনতা, আর বিবেকহীনতা থেকে সর্বনাশ!)
রাগের বশে অনেক সময় আমরা এমন কিছু বলে ফেলি, যা সম্পর্কের ক্ষতি করে। তুমিও নিশ্চয়ই কোনো ঝগড়ায় সঙ্গীকে এমন কিছু বলেছ, যা পরে অনুশোচনা হয়েছে, তাই না? তাই রাগের মুহূর্তে নিজেকে সামলানো খুব গুরুত্বপূর্ণ।
করণীয়: যখন রাগ আসবে, সঙ্গে সঙ্গে কোনো প্রতিক্রিয়া দিও না। একটু সময় নাও, শান্ত হও, তারপর কথা বলো। এতে ভুল বোঝাবুঝি কম হবে।
৪. অহংকার দূর করো, নম্রতা আনো
গীতার ১৩.৮-১৩.১২ শ্লোকে বলা হয়েছে:
“অমানিত্ব্বম্ অধম্ভিত্বম্…”
(নম্রতা ও অহংকারহীনতা জ্ঞানের লক্ষণ।)
অনেক সময় সম্পর্কে ছোটখাটো বিষয়ে আমরা অহংকার দেখাই। “আমি কেন প্রথমে সরি বলব?” এই মানসিকতা সম্পর্ক নষ্ট করে। সম্পর্ক বাঁচাতে যদি প্রথমে সরি বলতে হয়, তাহলে বলো! ভালোবাসার মানুষের থেকে বড় কোনো ইগো হতে পারে না।
করণীয়: অহংকার ত্যাগ করে নম্র হও। সম্পর্কের টানাপোড়েন কমাতে ‘সরি’ বলার মতো উদার মন গড়ে তোলো।
৫. বিশ্বাস গড়ে তোলো, সন্দেহ করো না
গীতার ৪.৩৯ শ্লোকে বলা হয়েছে:
“শ্রদ্ধাবান্ লভতে জ্ঞানম্…”
(যার বিশ্বাস আছে, সে জ্ঞান লাভ করে এবং শান্তি পায়।)
সম্পর্কে বিশ্বাসই হলো ভিত্তি। কিন্তু সন্দেহ একবার ঢুকে গেলে, তা ধ্বংসের কারণ হয়। বারবার সঙ্গীর ফোন চেক করা, অকারণে সন্দেহ করা, এগুলো সম্পর্কে বিষ ছড়িয়ে দেয়। বিশ্বাস থাকলে সম্পর্ক ভালোই চলবে, আর যদি বিশ্বাস না থাকে, তাহলে সম্পর্ক টিকবেই না!
করণীয়: সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস রাখো। যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে খোলাখুলিভাবে কথা বলো, কিন্তু অকারণে সন্দেহ কোরো না।
শেষ কথা: গীতার শিক্ষা দিয়ে সম্পর্ক মজবুত করো
প্রেমের সম্পর্ক সুন্দর করতে চাইলে শুধু আবেগ নয়, বুদ্ধিও লাগবে। গীতার শিক্ষা অনুসরণ করলে তোমার সম্পর্ক আরও গভীর, শক্তিশালী এবং সুন্দর হয়ে উঠবে।
তাহলে আজ কী করবে?
- নিজেকে আগে বোঝো
- নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসো
- রাগ নিয়ন্ত্রণ করো
- অহংকার দূর করো
- বিশ্বাস রাখো
সম্পর্কের প্রতিটি দিন গীতার আলোকে এগিয়ে নিয়ে যাও। ভালোবাসা শুধু অনুভূতি নয়, এটি এক মহান সাধনা!