বিয়ে বা প্রেমের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ৬টি উপায় গীতার আলোকে

আজকের দিনে প্রেম বা বিয়ে নিয়ে দ্বিধায় পড়াটা খুব স্বাভাবিক। কাকে জীবনসঙ্গী বানাবো? সম্পর্কটা টিকবে তো? সিদ্ধান্তটা কি একেবারে ঠিক? এমন অসংখ্য প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। কিন্তু, যদি বলি যে এই সব প্রশ্নের উত্তর আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে শ্রীকৃষ্ণ দিয়েছেন? হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছো! ভগবদ গীতা শুধু ধর্ম বা যুদ্ধক্ষেত্রের শিক্ষা দেয় না, বরং জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথও দেখায়। চল, গীতার আলোকে জেনে নিই প্রেম বা বিয়ের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ৬টি উপায়।

১. নিজেকে চিনো: “আত্মানং বিদ্ধি” (নিজেকে জানো)

বিয়ে বা প্রেমের সম্পর্কে যাওয়ার আগে জানতে হবে তুমি আসলে কে, তোমার লক্ষ্য কী? গীতায় কৃষ্ণ বলেছেন, “উদ্ধরেত আত্মনাআত্মানং নাত্মানমবসাদয়েত।” অর্থাৎ, নিজেকে নিজেই উন্নত করো, নিজেকে অবমূল্যায়ন কোরো না।

যদি তুমি নিজেকে ভালো করে না জানো, তাহলে অন্য কাউকে বুঝবে কীভাবে? নিজের শক্তি, দুর্বলতা, চাওয়া-পাওয়া, এবং জীবনের লক্ষ্য ঠিক করো। শুধু ভালো লাগার ওপর ভিত্তি করে সম্পর্কে যেও না, নিজের মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি কোন পথে হবে তা ভেবেই এগিয়ে যাও।

২. মোহ বনাম ভালোবাসা পার্থক্য করো

অনেক সময় আমরা প্রেমকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করি, কিন্তু গীতা বলে, “মোহেই সব সমস্যার মূল”। মোহ হলো একরকম আকর্ষণ যা ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু ভালোবাসা হলো শুদ্ধ, নিঃস্বার্থ ও চিরস্থায়ী।

ধরো, তুমি শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রেমে পড়লে, কিন্তু মানসিকতার মিল নেই। গীতা শেখায়, সম্পর্ক বেছে নেওয়ার সময় মোহ নয়, বরং মূল্যবোধ ও চারিত্রিক শক্তিকে গুরুত্ব দাও।

৩. সংকটে স্থির হও: ‘সমত্বং যোগ উচ্যতে’

সম্পর্কের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আসবেই। কিন্তু কীভাবে সেই সমস্যার সমাধান করবে? গীতায় বলা হয়েছে, “সমত্বং যোগ উচ্যতে”, যিনি সুখ-দুঃখে স্থির থাকেন, তিনিই প্রকৃত যোগী।

তাই, কোনো ঝগড়া বা ভুল বোঝাবুঝি হলেই সম্পর্ক থেকে পালিয়ে যাওয়া নয়, বরং স্থির থেকে সমাধানের চেষ্টা করো। নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে যুক্তিসঙ্গতভাবে সমস্যার সমাধান করাই হলো পরিণত সম্পর্কের চাবিকাঠি।

৪. কর্মফল চিন্তা করো, কিন্তু নিজ কর্তব্য পালন করো

গীতায় কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, “কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।” অর্থাৎ, তুমি শুধু তোমার কর্তব্য পালন করো, ফল নিয়ে চিন্তা কোরো না।

প্রেম বা বিয়ের ক্ষেত্রেও এটাই প্রযোজ্য। সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা না করে, বরং তোমার দায়িত্ব পালন করো। যদি সম্পর্ক তোমার প্রতি সত্যিকারের হয়, তাহলে তা টিকে থাকবে। যদি না টিকে, তাহলে সেটাই সেরা সিদ্ধান্ত হবে। তাই ভয় না পেয়ে, নিজের দিক থেকে সৎ থাকো।

৫. সঙ্গীর সাথে মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সংযোগ আছে কি?

গীতা বলে, “সৎসঙ্গ শক্তি দেয়, কুসঙ্গ দুর্বল করে।” সম্পর্ক গড়ার সময় শুধু বাহ্যিক বিষয় নয়, বরং মানসিক ও আধ্যাত্মিক সংযোগকেও গুরুত্ব দাও।

একটি ভালো সম্পর্ক সেই যেখানে দুজন একে অপরকে কেবল ভালোবাসে না, বরং একসঙ্গে মানসিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ হয়। তোমার সঙ্গী কি তোমাকে ভালো মানুষ হতে সাহায্য করছে? নাকি শুধু মোহের জালে ফেলে দিচ্ছে? গীতার শিক্ষার ভিত্তিতে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে নাও।

৬. ভয়ের কারণে ভুল সিদ্ধান্ত নিও না

অনেকেই পরিবার, সমাজ, বা একাকীত্বের ভয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। কিন্তু গীতায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, “ভয় দুর্বলতার লক্ষণ”। কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, “ক্ষত্রিয়ের জন্য ভয় নয়, সাহসই তার প্রকৃত ধর্ম।”

যদি সম্পর্ক নিয়ে তোমার মনে সংশয় থাকে, তাহলে শুধু ভয় বা চাপের কারণে হ্যাঁ বলো না। নিজেকে সময় দাও, পরিস্থিতি বোঝো, তারপর সিদ্ধান্ত নাও। সাহস নিয়ে গীতার পথ অনুসরণ করো, এবং নিজের হৃদয় ও বুদ্ধির মিলন ঘটিয়ে সিদ্ধান্ত নাও।

শেষ কথা: নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নাও!

বিয়ে বা প্রেম জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এতে ভুল হলে কষ্ট অনেক, কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে জীবন স্বর্গসম হয়। গীতা আমাদের শিখিয়েছে, সত্য, ধৈর্য, স্থিরতা, এবং আত্মচিন্তা দিয়েই সঠিক পথ বেছে নিতে হয়।

তাই, আজ যদি তুমি সম্পর্কে যাওয়ার কথা ভাবছো, তাহলে গীতার এই শিক্ষাগুলো মাথায় রাখো: 

  1. নিজের প্রকৃত সত্তাকে বোঝো।
  2.  মোহ নয়, সত্যিকারের ভালোবাসা খুঁজে নাও।
  3.  সংকটে পালিয়ে যেও না, স্থির থেকো।
  4.  ফল নয়, কর্তব্যকে গুরুত্ব দাও।
  5. সঙ্গীর মানসিক ও আধ্যাত্মিক সংযোগ বিবেচনা করো।
  6. ভয় নয়, সাহস নিয়ে সিদ্ধান্ত নাও।

জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়া কোনো সহজ কাজ নয়, কিন্তু গীতার পথ অনুসরণ করলে তুমি নিশ্চিতভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। শ্রীকৃষ্ণের মতোই দৃঢ় চিত্তে, প্রেমের পথে এগিয়ে চলো! 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top