জীবনে ব্যর্থতা আসবেই। পরীক্ষায় ভালো করতে পারিনি? ব্যবসা লস হয়েছে? চাকরির ইন্টারভিউতে বাদ পড়েছেন? এগুলো খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যর্থতার পর কী করবেন? হতাশ হয়ে বসে থাকবেন, নাকি আবার উঠে দাঁড়াবেন?
ভগবদ্গীতা আমাদের জীবনের এই কঠিন মুহূর্তগুলোতে পথ দেখায়। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যেভাবে যুদ্ধে লড়াই করার জন্য সাহস দিয়েছিলেন, তেমনি আমাদেরও শেখান ব্যর্থতার পর কীভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আজ আমরা জানব ভগবদ্গীতার আলোকে ৬টি কার্যকরী সমাধান।
১. নিজের কর্তব্য পালন করুন, ফলের চিন্তা করবেন না
গীতায় বলা হয়েছে: “কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।” অর্থাৎ, তোমার অধিকার কেবল তোমার কর্মে, কিন্তু ফলের আশা করতে যেও না।
এখন ভাবুন, আপনি যদি শুধু পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা করেন, তাহলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারবেন না। ঠিক তেমনি, যদি একজন ক্রিকেটার শুধু ম্যাচ জেতার চিন্তায় থাকেন, তাহলে তিনি খেলায় ফোকাস হারাবেন। তাই নিজের কাজে মন দিন, ফল আসবেই।
২. সফলতা এবং ব্যর্থতাকে সমানভাবে গ্রহণ করুন
শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন: “সমত্বং যোগ উচ্যতে।” অর্থাৎ, সুখ-দুঃখ, জয়-পরাজয়কে সমানভাবে গ্রহণ করাই হলো প্রকৃত যোগ।
ধরুন, আপনি একটি চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছেন কিন্তু সিলেক্ট হননি। এখন হতাশ হলে কি কোনো লাভ হবে? বরং এই অভিজ্ঞতা থেকে শিখে, পরেরবার আরও ভালো প্রস্তুতি নিন। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়াই হলো আসল বুদ্ধিমত্তা।
৩. ব্যর্থতার কারণ বিশ্লেষণ করুন
কখনও ভেবে দেখেছেন, কেন আপনি ব্যর্থ হলেন? হয়তো আপনি যথেষ্ট প্রস্তুতি নেননি, হয়তো কৌশলগত ভুল ছিল, হয়তো সময় ব্যবস্থাপনায় গাফিলতি ছিল।
ভগবদ্গীতা আমাদের আত্মবিশ্লেষণের গুরুত্ব শেখায়। নিজের ভুলগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো সংশোধন করুন। যেমন, যদি কোনো স্টার্টআপ ব্যর্থ হয়, তবে তার ফাউন্ডারকে বুঝতে হবে কোথায় ভুল হয়েছে। হয়তো মার্কেট রিসার্চ ঠিকমতো হয়নি বা ফান্ডিং সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয়নি।
৪. আত্নবিশ্বাস বজায় রাখুন এবং ইতিবাচক থাকুন
শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন: “ন হি কল্যাণকৃত্ কশ্চিদ্দুর্গতিং তাতা গচ্ছতি।” অর্থাৎ, যে ভালো কাজ করে, সে কখনো ধ্বংস হয় না।
আপনি যদি কঠোর পরিশ্রম করেন এবং সৎ পথে থাকেন, তাহলে ব্যর্থতাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সফলতা আসবেই।
যেমন ধরুন, থমাস এডিসন হাজারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন, কিন্তু একবার সফল হয়েই বিদ্যুতের বাল্ব আবিষ্কার করেছিলেন। তাই ধৈর্য হারাবেন না, সামনে এগিয়ে যান।
৫. সঠিক সঙ্গ বেছে নিন
ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে: “যদ্ যদাচরতি শ্রেষ্ঠস্তৎ তদেবেতরো জনঃ।” অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি যেভাবে চলে, অন্যরাও তাকে অনুসরণ করে।
আপনার আশেপাশের মানুষ যদি সবসময় নেতিবাচক কথা বলে, তাহলে আপনিও হতাশ হয়ে পড়বেন। তাই এমন বন্ধু-বান্ধব এবং মেন্টর বেছে নিন, যারা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।
৬. ধৈর্য ধরুন এবং অধ্যবসায় চালিয়ে যান
গীতায় বলা হয়েছে: “তিতীক্ষবঃ করুণিকাঃ সদা সত্যবচনাঃ।” অর্থাৎ, যারা ধৈর্যশীল, সহানুভূতিশীল এবং সত্যবাদী, তারা শেষ পর্যন্ত সফল হয়।
অনেক সময় আমরা খুব তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিই। কিন্তু সফলতা একদিনে আসে না। যদি স্টিভ জবস বা এলন মাস্কের জীবনী পড়েন, দেখবেন তারা বহু ব্যর্থতার পর সফল হয়েছেন। তাই ধৈর্য ধরুন, চেষ্টা চালিয়ে যান।
উপসংহার: এগিয়ে যাওয়ার সময় এখনই!
ব্যর্থতা মানেই শেষ নয়, এটি কেবল নতুন শুরুর ইঙ্গিত। ভগবদ্গীতার এই ৬টি শিক্ষা যদি জীবনে প্রয়োগ করতে পারেন, তাহলে ব্যর্থতা কখনোই আপনাকে কাবু করতে পারবে না।
নিজের কাজ করে যান, ফলের চিন্তা করবেন না।
সফলতা ও ব্যর্থতাকে সমানভাবে গ্রহণ করুন।
নিজের ভুল বিশ্লেষণ করুন এবং শিখুন।
আত্মবিশ্বাস রাখুন, ইতিবাচক থাকুন।
সঠিক সঙ্গী নির্বাচন করুন।
ধৈর্য ধরুন এবং পরিশ্রম চালিয়ে যান।
তরুণ বন্ধুরা, মনে রাখবেন – সফল হতে গেলে ব্যর্থতাকে মেনে নিতে হবে, কারণ ব্যর্থতাই শেখায় কীভাবে সফল হতে হয়। এখন থেকে ব্যর্থতা এলেই মন খারাপ নয়, বরং গীতার উপদেশ মনে করে নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যান!