ভয়কে জয় করার ৫টি উপায় গীতার আলোকে

আমাদের জীবনে ভয় একটা স্বাভাবিক অনুভূতি। কখনো পড়াশোনার চাপ, কখনো ক্যারিয়ারের অনিশ্চয়তা, আবার কখনো সম্পর্কের টানাপোড়েন আমাদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করে। এই ভয় অনেক সময় আমাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে, সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয় এবং আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

কিন্তু শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা আমাদের শেখায়, ভয়কে কীভাবে জয় করা যায় এবং কীভাবে সাহসের সাথে জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করা যায়। আজ আমরা গীতার আলোকে এমন ৫টি উপায় নিয়ে আলোচনা করবো, যা আমাদের ভয়কে পরাজিত করতে সাহায্য করবে।

১. আত্ম-পরিচয় বোঝা (জ্ঞান যোগ)

গীতায় (২.১৩) বলা হয়েছে, “দেহের পরিবর্তনশীলতা যেমন আমরা দেখি, তেমনি আত্মা চিরস্থায়ী এবং অপরিবর্তনীয়।” ভয় আসে তখনই যখন আমরা নিজেদের শুধুমাত্র শরীর বা পরিস্থিতির সাথে সম্পৃক্ত করি। গীতার এই জ্ঞানের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, আমরা কেবল শরীর নই, আমরা আত্মা।

কীভাবে প্রয়োগ করা যায়:

  • নিজেকে নিয়মিত সময় দিন, নিজের শক্তি ও দুর্বলতা বুঝুন।
  • ধ্যান ও যোগাভ্যাস করুন, যা আপনাকে আত্মজ্ঞান অর্জনে সাহায্য করবে।
  • কঠিন পরিস্থিতিতে বলুন: “আমি শক্তিশালী, আমি চিরন্তন, এই মুহূর্ত কেটে যাবে।”

২. কর্মে মনোযোগ (কর্ম যোগ)

ভয় অনেক সময় আমাদের অলসতা এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বাড়ে। গীতা (২.৪৭) বলে, “তোমার কর্তব্য হলো কাজ করা, ফলের চিন্তা তোমার কর্তব্য নয়।” এর মানে হলো, আমাদের উচিত কর্মের প্রতি মনোযোগ দেওয়া, ফলাফল নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়া।

কীভাবে প্রয়োগ করা যায়:

  • যেকোনো কঠিন কাজকে ছোট ছোট ধাপে ভাগ করুন এবং একটি সময়ে একটি কাজ করুন।
  • ব্যর্থতা নিয়ে না ভেবে কাজে ফোকাস করুন।
  • অপ্রয়োজনীয় দুশ্চিন্তা বন্ধ করুন এবং কাজের প্রক্রিয়াকে উপভোগ করুন।

৩. ভক্তির মাধ্যমে মনকে শান্ত রাখা (ভক্তি যোগ)

কখনো কখনো ভয়ের মূল কারণ হলো অস্থির মন। গীতা (১৮.৬৬) বলে, “আমার শরণ গ্রহণ করো, আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করবো।” এই বিশ্বাস আমাদের অন্তরের সমস্ত অস্থিরতা দূর করে এবং আমাদের শান্ত থাকতে সাহায্য করে।

কীভাবে প্রয়োগ করা যায়:

  • প্রতিদিন সকালে প্রার্থনা করুন বা ভগবানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
  • নিজেকে বড় কোনো শক্তির অংশ হিসেবে ভাবুন, যা আপনাকে সুরক্ষা দেবে।
  • জীবনযাত্রায় সহজ ও ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখুন।

৪. সংযম ও ধৈর্য (ধ্যান যোগ)

ভয়কে জয় করতে হলে আমাদের সংযম ও ধৈর্য থাকা প্রয়োজন। গীতায় (৬.৫) বলা হয়েছে, “নিজেকে নিজেই উন্নীত করো, নিজেকে নিজের শত্রু করো না।” ধৈর্য ও সংযমের মাধ্যমে আমরা ধীরে ধীরে আমাদের সব ভয়কে কাটিয়ে উঠতে পারি।

কীভাবে প্রয়োগ করা যায়:

  • প্রতিদিন কিছু সময় একা কাটান এবং নিজের চিন্তাগুলো পর্যবেক্ষণ করুন।
  • সমস্যার সমাধান খুঁজতে ধৈর্য ধরুন, তাৎক্ষণিক সমাধানের চিন্তা করবেন না।
  • স্ট্রেস কমানোর জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।

৫. ইতিবাচক সঙ্গ (সৎসঙ্গ)

আমাদের চারপাশের মানুষ আমাদের চিন্তাভাবনা ও আবেগকে প্রভাবিত করে। গীতা (৩.৩৪) বলে, “ভালো সঙ্গ গ্রহণ করো, কারণ খারাপ সঙ্গ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।” ইতিবাচক এবং অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষের সাথে থাকলে ভয় অনেকটাই কমে যায়।

কীভাবে প্রয়োগ করা যায়:

  • যেসব মানুষ আপনাকে উৎসাহিত করে, তাদের সাথে সময় কাটান।
  • অনুপ্রেরণাদায়ী বই পড়ুন বা পডকাস্ট শুনুন।
  • নেতিবাচক সংবাদ বা অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সংযম আনুন।

উপসংহার

ভয়কে জয় করা সহজ নয়, তবে গীতার এই শিক্ষাগুলো অনুসরণ করলে আমরা ধাপে ধাপে ভয়কে পরাজিত করতে পারি। নিজের আত্ম-পরিচয় বোঝা, কাজের প্রতি মনোযোগী হওয়া, ধৈর্য ধরা এবং ইতিবাচক সঙ্গ নেওয়া আমাদেরকে এক আত্মবিশ্বাসী জীবন যাপন করতে সাহায্য করবে।

আজ থেকেই একটি ছোট পদক্ষেপ নিন। গীতার এই উপদেশগুলোর মধ্যে অন্তত একটি নিজের জীবনে প্রয়োগ করুন এবং দেখুন কীভাবে আপনার ভয়ের জায়গায় আত্মবিশ্বাসের আলো ফুটে উঠছে!

তাহলে, আর দেরি কেন? ভয়কে বলুন বিদায়, আর সাহসের সাথে এগিয়ে যান আপনার লক্ষ্যের দিকে!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top