সম্পর্কে রাগ এবং অভিমান কাটানোর জন্য ভগবদ্গীতার ৬টি টিপস

আমরা সবাই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে প্রিয়জনের সঙ্গে রাগ, অভিমান বা মনোমালিন্যে জড়িয়ে পড়ি। ছোটখাটো বিষয় থেকে বড় সমস্যাও তৈরি হতে পারে, যা সম্পর্কের উপর চাপ ফেলে। তবে কীভাবে এগুলো সামলানো যায়? এই বিষয়ে ভগবদ্গীতা আমাদের অসাধারণ কিছু শিক্ষা দেয়, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সম্পর্কগুলোকে আরও দৃঢ় করতে পারে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক ভগবদ্গীতার ৬টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস, যা আমাদের রাগ ও অভিমান নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।

১. রাগের পরিণতি বুঝুন (ভগবদ্গীতা ২.৬৩)

ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে:

“ক্রোধ থেকে মোহের সৃষ্টি হয়, মোহ থেকে স্মৃতিভ্রংশ হয়, স্মৃতিভ্রংশ থেকে বুদ্ধি বিনষ্ট হয় এবং বুদ্ধির বিনষ্টি হলে মানুষ ধ্বংস হয়ে যায়।”

রাগ শুধুমাত্র মুহূর্তের একটি অনুভূতি নয়, এটি আমাদের চিন্তাভাবনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে নষ্ট করতে পারে। মনে করুন, আপনার বন্ধু বা প্রেমিক/প্রেমিকার সঙ্গে তুচ্ছ কারণে মনোমালিন্য হয়েছে, রাগের মাথায় হয়তো এমন কিছু বলবেন যা পরে আপনারই খারাপ লাগবে। তাই রাগের সময় চুপ থেকে পরিস্থিতিকে বোঝার চেষ্টা করুন।

২. ক্ষমার শক্তি (ভগবদ্গীতা ১৬.৩)

ভগবদ্গীতায় উল্লেখ করা হয়েছে:

“ক্ষমা হলো দেবত্বের লক্ষণ। যারা সত্যিকারের শক্তিশালী, তারাই ক্ষমা করতে পারে।”

ধরুন, আপনার কাছের বন্ধু কোনো ভুল করেছে, এবং আপনি প্রচণ্ড অভিমান করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অভিমান ধরে রাখলে আপনি নিজেই কষ্ট পাবেন। ক্ষমা করার মানে এই নয় যে ভুলকে সমর্থন করা, বরং নিজের মনকে শান্ত রাখা। তাই অহংকার দূরে রেখে ক্ষমার মাধ্যমে সম্পর্ককে সুন্দর করে তুলুন।

৩. আসক্তি কমান, প্রত্যাশা নিয়ন্ত্রণ করুন (ভগবদ্গীতা ২.৪৭)

গীতায় বলা হয়েছে:

“তোমার শুধু কর্ম করার অধিকার আছে, কিন্তু কর্মের ফলের অধিকার নেই।”

আমরা প্রিয়জনদের থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করি, কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ না হলে অভিমান বা হতাশা জন্মায়। তাই প্রত্যাশার ভার কমিয়ে শুধুমাত্র ভালোবাসা দিয়ে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার কাছের মানুষটি আপনার জন্মদিন ভুলে যায়, তার মানে এই নয় যে সে আপনাকে কম ভালোবাসে। প্রত্যাশা কমিয়ে দিন, দেখবেন সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।

৪. আত্মনিয়ন্ত্রণ চর্চা করুন (ভগবদ্গীতা ৬.৫)

গীতায় বলা হয়েছে:

“নিজেকে নিজের শত্রু নয়, বরং বন্ধু বানাও।”

আমাদের রাগ, অভিমান বা কষ্ট অনেক সময় আমাদের চিন্তাভাবনার ওপর নির্ভর করে। আমরা যদি নিজের আবেগগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে শিখি, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। পরবর্তীবার যখন রাগ হবে, তখন কিছুক্ষণ গভীর শ্বাস নিন, গান শুনুন বা বই পড়ুন, যাতে রাগের মুহূর্তটি কেটে যায়।

৫. দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন (ভগবদ্গীতা ১৮.৬২)

ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে:

“সব সমস্যার সমাধান ভগবানের শরণ নিলে সম্ভব।”

আমরা প্রায়শই শুধু নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমস্যা দেখি, কিন্তু অন্যের অবস্থান থেকে ভাবি না। ধরুন, আপনার সঙ্গী আপনার বার্তা না পড়ে সোজা ঘুমিয়ে পড়েছে। আপনি ভাবলেন, সে আপনাকে গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু যদি বাস্তবতা হয় যে সে ক্লান্ত ছিল? সমস্যা বোঝার আগে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৬. নিজেকে এবং সম্পর্ককে সময় দিন (ভগবদ্গীতা ৬.১৬-১৭)

ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে:

“অত্যাধিক সুখ বা দুঃখ উভয়ই ক্ষতিকর, সংযমই সেরা পথ।”

অনেক সময় রাগ বা অভিমান বেশি দিন ধরে রাখলে সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যায়। তাই মাঝে মাঝে বিরতি নিন, নিজেকে সময় দিন এবং সম্পর্কের ইতিবাচক দিকগুলো ভাবুন। ভালো মুহূর্তগুলো মনে করে দেখুন, তাহলে ছোটখাটো অভিমান দূর হয়ে যাবে।

শেষ কথা: ভালোবাসাই সেরা পথ

ভগবদ্গীতার শিক্ষা আমাদের শেখায় যে সম্পর্ক রাগ বা অভিমানের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। ছোটখাটো বিষয়গুলো মনের মধ্যে জমতে দিলে বড় সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই নিজেকে সংযত করুন, ক্ষমা করতে শিখুন, প্রত্যাশা কমান এবং সম্পর্কের সুন্দর দিকগুলো উপভোগ করুন।

যদি কখনো মনে হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়ছে, তাহলে গীতার এই উপদেশগুলো মনে করুন। আর নিজেকে প্রশ্ন করুন, রাগ বড়, না সম্পর্ক?

প্রিয়জনকে ভালোবাসুন, কারণ শেষ পর্যন্ত ভালোবাসাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top