আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ, পড়াশোনা বা কাজের প্রেশার – সব মিলিয়ে আমাদের জীবনে স্ট্রেস যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। আমাদের মনের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে অনেকেই হতাশা ও উদ্বেগে ভুগছে। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান প্রাচীন শাস্ত্রেই লুকিয়ে আছে! ভগবদ্গীতা আমাদের জীবনের প্রতিটি সমস্যার জন্য কার্যকরী সমাধান দিতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক স্ট্রেস কমানোর ৮টি কার্যকরী কৌশল ভগবদ্গীতার আলোকে।
১. কর্তব্যপালনে মনোনিবেশ করুন (Focus on Duty)
ভগবদ্গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন – “তোমার কর্তব্যে মনোনিবেশ করো, ফল নিয়ে চিন্তা কোরো না।” আমাদের জীবনে স্ট্রেসের অনেক বড় কারণ হল অনিশ্চয়তা ও ফলাফলের প্রতি অতিরিক্ত চিন্তা। যদি আমরা কেবল নিজের কাজের প্রতি মনোযোগ দিই এবং ফলাফলের চিন্তা ছেড়ে দিই, তবে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যাবে।
২. সমত্ব বজায় রাখা (Maintain Equanimity)
গীতায় বলা হয়েছে, “সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, জয়-পরাজয় সমানভাবে গ্রহণ করো।” আমাদের জীবনে ওঠা-নামা থাকবেই, কিন্তু প্রতিটি পরিস্থিতিকে শান্তভাবে গ্রহণ করতে পারলে স্ট্রেস অনেকটাই কমে আসে। উদাহরণস্বরূপ, পরীক্ষার ফল খারাপ হলে হতাশ না হয়ে, আগামী দিনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
৩. আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন (Build Self-Confidence)
শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, “নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো, আত্মা অমর।” এই উপলব্ধি আমাদের জীবনের চ্যালেঞ্জের সামনে দৃঢ় থাকতে সাহায্য করে। যখন আমরা নিজেদের সামর্থ্যে বিশ্বাস রাখি, তখন আমাদের মনে নেতিবাচক চিন্তার স্থান কমে যায়।
৪. ধ্যান ও প্রার্থনা (Meditation & Prayer)
ভগবদ্গীতায় ধ্যানের গুরুত্ব বারবার বলা হয়েছে। প্রতিদিন মাত্র ১০-১৫ মিনিট ধ্যান করলে মন শান্ত হয় এবং স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কাজের চাপে ক্লান্ত লাগলে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতি মনোযোগ দিন, দেখবেন মানসিক চাপ কমে যাবে।
৫. সংযম ও নিয়ন্ত্রণ (Practice Self-Control)
গীতার শিক্ষায় বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি সংযমী এবং নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে সত্যিকার আনন্দ লাভ করে।” অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, বা অপ্রয়োজনীয় চিন্তা – এসব আমাদের স্ট্রেস বাড়ায়। সংযম অনুশীলন করলে আমরা চাপমুক্ত থাকতে পারি।
৬. ভালো সঙ্গ নির্বাচন করুন (Choose Good Company)
“সৎসঙ্গে সবার উন্নতি হয়,” – গীতায় বারবার ভালো সঙ্গের গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। নেতিবাচক মানুষের থেকে দূরে থাকা এবং ইতিবাচক, অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষের সঙ্গ গ্রহণ করা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৭. কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজুন (Find Joy in Work)
গীতায় বলা হয়েছে, “কাজকে ভালোবাসো, সেটিই তোমার আনন্দের উৎস হোক।” যখন আমরা ভালোবাসা নিয়ে কাজ করি, তখন কাজ আর বোঝা মনে হয় না। পড়াশোনা, কাজ বা দৈনন্দিন দায়িত্ব – সবকিছুর মধ্যে আনন্দ খুঁজতে পারলে স্ট্রেস সহজেই দূর হয়।
৮. আসক্তি থেকে মুক্তি (Let Go of Attachments)
গীতার অন্যতম শিক্ষা হলো – “আসক্তি ছেড়ে দাও এবং নিরাসক্ত চিত্তে কাজ করো।” আমরা যখন কোন কিছুতে অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়ি, তখন সেটি আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে। তাই অতিরিক্ত মোহ বা নির্ভরশীলতা কমিয়ে স্বাধীন মনোভাব রাখা উচিত।
গীতার শিক্ষাকে জীবনে গ্রহণ করুন
স্ট্রেস জীবন থেকে পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়, তবে গীতার এই সহজ শিক্ষাগুলো যদি আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করি, তাহলে চাপমুক্ত ও সুখী জীবনযাপন সম্ভব। প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসের মাধ্যমে মানসিক শান্তি অর্জন করা যায়।
তাই আজ থেকেই নিজের জীবনে গীতার এই মূল শিক্ষাগুলো প্রয়োগ করুন এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে শান্ত ও সুখী করে তুলুন!