১ম অধ্যায় অর্জুনবিষাদযোগ শ্লোক ১৪

১ম অধ্যায়: অর্জুনবিষাদযোগ শ্লোক: ১৪

শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার প্রথম অধ্যায়ের চতুর্দশ শ্লোকটি অত্যন্ত অর্থবহ। শ্লোকটি একটি বিশেষ মুহূর্তের বর্ণনা করে, যেখানে মহাভারতের যুদ্ধে কুরুক্ষেত্রের ময়দানে কুরুপক্ষ এবং পাণ্ডবপক্ষ মুখোমুখি। শ্লোকটি বলতে চায়, “তারপর মাধব (শ্রীকৃষ্ণ) ও পাণ্ডব (অর্জুন) মহৎ রথে সাদা ঘোড়ায় সজ্জিত হয়ে নিজ নিজ দেবীয় শঙ্খ বাজালেন।”

 যুদ্ধের শুরুতে শঙ্খধ্বনির তাৎপর্য

হিন্দু ধর্মে শঙ্খধ্বনি একটি পবিত্র কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত। প্রাচীন ভারতীয় যুদ্ধ প্রথায়, যুদ্ধ শুরুর আগে শঙ্খধ্বনি দ্বারা দেবতাদের আহ্বান জানানো হত এবং যুদ্ধের দেবতা কার্তিকেয় ও মহাকাল ভগবানের কৃপা কামনা করা হত। এই শঙ্খধ্বনি শত্রুদের জন্য ভীতি ও প্রতিপক্ষের সাহসিকতা প্রকাশ করত। 

 শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের শঙ্খ বাজানো  একটি প্রতীকী অর্থ

এই বিশেষ মুহূর্তে শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের শঙ্খ বাজানো মানে একাধারে শক্তি ও ন্যায়ের প্রতিনিধিত্ব। শ্রীকৃষ্ণের শঙ্খের নাম ছিল পাঞ্চজন্য এবং অর্জুনের শঙ্খের নাম দেবদত্ত। 

 শ্রীকৃষ্ণের পাঞ্চজন্য: এটি ন্যায় ও সত্যের প্রতীক।

 অর্জুনের দেবদত্ত: সাহস, সঠিক সিদ্ধান্ত, ও শত্রুদের ওপর বিজয়লাভের প্রতীক।

 মহাভারতের প্রেক্ষাপটে যুদ্ধের প্রস্তুতি

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধটি শুধুমাত্র দুই পরিবারের মধ্যে যুদ্ধ ছিল না; এটি ছিল ন্যায়ের বিরুদ্ধে অন্যায়ের যুদ্ধ। শ্রীকৃষ্ণ এবং অর্জুনের শঙ্খধ্বনি, কেবল যুদ্ধের আহ্বান নয়, বরং ধর্ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি জাগরণের প্রতীক। 

 যুদ্ধের প্রস্তুতিতে শঙ্খধ্বনির গুরুত্ব

শঙ্খধ্বনি একটি মহান শক্তির প্রকাশ এবং শত্রুদের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যখন পাণ্ডবরা শঙ্খধ্বনি শুরু করলেন, তখন সেই ধ্বনি কৌরবদের মনোবল কমিয়ে দেয়। 

 ছোট গল্প: শঙ্খধ্বনি এবং দেবতাদের সহায়তা

হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয় যে শঙ্খধ্বনি শুনলে দেবতারা উপস্থিত হন এবং যুদ্ধে যোগদানকারীদের সহায়তা করেন। একবার দেবরাজ ইন্দ্র শঙ্খধ্বনি শুনে সমরাঙ্গণে উপস্থিত হন এবং যোদ্ধাদের সাহস যোগান। 

 শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের মধ্যে সম্পর্কের প্রতীকী অর্থ

শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের সম্পর্ক গুরুশিষ্য সম্পর্কের একটি অনন্য উদাহরণ। যুদ্ধে, শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের রথ চালাচ্ছিলেন এবং এই সম্পর্ক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাওয়া যায়—মানুষের জীবনের রথের চালক তার নিজের আত্মা বা ঈশ্বর হতে পারেন, যিনি সত্য পথে মানুষকে পরিচালিত করেন।

শঙ্খধ্বনি: ধর্ম ও মানবতার একটি পরিচয়

শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন যখন শঙ্খ বাজান, তখন তা ছিল ধর্ম ও মানবতার একটি পরিচয়। শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার মতে, এই শঙ্খধ্বনি কেবল যুদ্ধের নয় বরং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার প্রতীক। 

 শঙ্খধ্বনির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান

 দেবতাদের আহ্বান: দেবতাদের কাছ থেকে আশীর্বাদ লাভ করা।

 শত্রুর মধ্যে ভীতি সঞ্চার: শত্রুদের মনোবল কমিয়ে তাদের পরাজিত করতে সাহায্য করা।

 পবিত্রতার পরিচায়ক: শঙ্খধ্বনি পরিবেশকে পবিত্র ও উজ্জীবিত করে।

শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার এই শ্লোকটি শঙ্খধ্বনির মধ্য দিয়ে আমাদের আত্মবিশ্বাস, সাহসিকতা এবং ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top