ভগবদ্গীতার প্রথম অধ্যায়ে শ্লোক ১৯ বিশ্লেষণ করতে গেলে আমাদের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রথম দিনটির প্রচণ্ড উত্তেজনা এবং উভয় পক্ষের মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। এখানে অর্জুনের দলনেতারা শঙ্খ বাজিয়ে ঘোষণা করেছেন যে তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। এই প্রচণ্ড শঙ্খধ্বনি কেবলমাত্র ধৃতরাষ্ট্রদের ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য ছিল না; এটি তাদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করে এবং পৃথিবী ও আকাশে তুমুল প্রতিধ্বনি তুলেছিল।
শ্লোকটি ও এর বিশ্লেষণ
শ্লোক:
> “স ঘোষো ধার্তরাষ্ট্রাণাং হৃদয়ানি ব্যদারয়ৎ,
নভশ্চ পৃথিবীং চৈব তুমুলোহভ্যনুনাদয়ন্” ॥১৯॥
বাংলা অর্থ:
এমন প্রবল শঙ্খধ্বনি ধৃতরাষ্ট্রদের হৃদয়কে ব্যাকুল করে তোলে এবং সেই আওয়াজ আকাশ ও পৃথিবীকে কাঁপিয়ে তোলে।
কুরুক্ষেত্রের আবহ ও শঙ্খধ্বনির তাৎপর্য
যুদ্ধ শুরুর আগমুহূর্তে উভয়পক্ষই শঙ্খ বাজিয়ে তাদের শক্তি এবং মনোবলের পরিচয় দেয়। অর্জুন এবং কৃষ্ণ যখন শঙ্খ বাজান, সেই আওয়াজ প্রতিপক্ষের হৃদয়ে ভয় সৃষ্টি করে। আর এই ভয় কোনো সাধারণ ভয় নয়; এটি ছিল কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নিজের মৃত্যু বা পরাজয়ের অনুভূতি।
ধর্ম ও শাস্ত্রে শঙ্খধ্বনির গুরুত্ব
হিন্দু ধর্মে শঙ্খধ্বনিকে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। এটি:
ভগবান বিষ্ণুর সঙ্গী হিসেবে পরিচিত
ধর্মযুদ্ধের সূচনাকারী
ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার প্রতীক
ধার্তরাষ্ট্রদের অন্তরের ভয় এবং আশঙ্কা
ধৃতরাষ্ট্রের পুত্ররা অবিচারের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। পাণ্ডবদের সাথে করা অন্যায়, দ্রৌপদীর অপমান, এবং রাজ্যছাড়ার মতো ঘটনা তাদের ধীরে ধীরে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে এসেছিল যেখানে তারা জানত, তাদের উপর ন্যায়ের আঘাত আসতে বাধ্য।
তাদের ভয় কেন ছিল?
অন্যায়ের ফল: তারা জানত তাদের কাজের জন্য কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
অর্জুনের শঙ্কা ও কৃষ্ণের শঙ্খধ্বনি: কৃষ্ণ যখন তার পাঞ্চজন্য শঙ্খ বাজান, তখন সেই শব্দ তাদেরকে ভেতর থেকে নাড়া দিয়ে যায়।
শঙ্খধ্বনি ও হিন্দু পুরাণের গল্প
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শঙ্খধ্বনি শুধুমাত্র একটি সামরিক সংকেত ছিল না; এটি ছিল ন্যায় প্রতিষ্ঠার আহ্বান। মহাভারত থেকে আরেকটি উল্লেখযোগ্য শঙ্খধ্বনির গল্প হল মহাদেবের। যখন দানব রাজ রাবণ শিবের তপস্যা করছিলেন এবং লংকায় পাপাচার বাড়ছিল, তখন দেবতারা শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে শিবের সাহায্য প্রার্থনা করেন।
এই শ্লোকের শিক্ষা
এই শ্লোকটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে:
ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য শক্তি প্রদর্শন প্রয়োজন: কখনও কখনও অন্যায়ের প্রতিকার করতে শক্তির প্রদর্শন করা জরুরি।
ভয় পেতে নেই: কৃষ্ণের শঙ্খধ্বনি অর্জুনকে ভরসা দিয়েছে।