১ম অধ্যায় অর্জুনবিষাদযোগ শ্লোক ৩

১.৩ঃ তোমার জীবনের রণাঙ্গন

পশ্যৈতাং পাণ্ডুপুত্রাণামাচার্য মহতীং চমূম্।
ব্যূঢ়াং দ্রুপদপুত্রেণ তব শিষ্যেণ ধীমতা ॥৩॥

তোমার জীবনের রণাঙ্গন কোথায়? তুমি কি এক কঠিন সমস্যার মুখোমুখি? প্রতিদিন আমরা এমন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়াই যেখানে মনে হয় যেন এক বিশাল যুদ্ধক্ষেত্র আমাদের সামনে। জীবনের এই যুদ্ধকে কীভাবে জিতব, তার জন্যই গীতার জ্ঞান আমাদের আলোর পথ দেখায়।

আমি যখন এই শ্লোকটি পড়ি, তখন ভাবি—আমাদের জীবনেও তো এমন সময় আসে যখন সমস্যাগুলো পাহাড়ের মতো বড় হয়ে ওঠে। ঠিক যেমন অর্জুন যুদ্ধক্ষেত্রে তার দ্বিধার সম্মুখীন হয়েছিল, আমরাও তেমন পরিস্থিতিতে পড়ি। তবে গীতা বারবার আমাদের শেখায়, নিজের কর্তব্য পালনে স্থির থাকা এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই হলো চাবিকাঠি।

আমাদের জীবনের রণক্ষেত্র ও তার সমাধান

১. কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা
তোমার কর্মক্ষেত্রে হয়তো প্রতিদিন তোমার সহকর্মীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছ। কখনো মনে হয়, তুমি পিছিয়ে যাচ্ছ। এমন পরিস্থিতিতে গীতার পরামর্শ:
“কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।”
তোমার কাজ করো, কিন্তু তার ফল নিয়ে অস্থির হয়ো না। নিজের কাজের প্রতি মনোনিবেশ করো, ফল আপনিই আসবে।

২. সম্পর্কের টানাপোড়েন
পরিবার বা বন্ধুত্বের মধ্যে মতবিরোধ কি তোমাকে দিশেহারা করছে? ভেবে দেখো, অনেক সময় আমরা অহংকার বা ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে সম্পর্কগুলো নষ্ট করি। গীতা বলে:
“সমদুঃখসুখং ধীরং সঃ অমৃতত্বায় কল্পতে।”
তুমি যদি সুখ-দুঃখকে সমভাবে গ্রহণ করতে শেখো, সম্পর্কগুলো আরও মজবুত হবে।

৩. নিজেকে হারিয়ে ফেলা
আমাদের জীবনে এমন সময় আসে যখন আমরা নিজেদেরই চিনতে পারি না। হতাশা, একাকিত্ব বা ব্যর্থতা আমাদের গ্রাস করে। এই সময় গীতার এই কথাটি মনে রাখা জরুরি:
“উদ্ধরেদাত্মনাআত্মানং নাত্মানমবসাদয়েত।”
তুমি নিজেকে নিজেই উদ্ধার করবে। কেউ তোমার জন্য আসবে না, নিজের ক্ষমতায় বিশ্বাস রাখো।

গীতার আলোয় জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ

১. স্টিভ জবসের শিক্ষা
স্টিভ জবস তার জীবনেও ব্যর্থতা এবং প্রত্যাখ্যানের মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু তিনি কখনো আশা হারাননি। তার প্রতিটি পদক্ষেপে ছিল নিজের কাজের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। গীতার আদর্শে, তিনি তার কর্মফল নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে নিজের কাজ করে গেছেন।

২. মায়ের আত্মত্যাগ
একজন মা প্রতিদিন তার সন্তানের জন্য নিরলস পরিশ্রম করেন, কিন্তু কখনো তার ফল নিয়ে চিন্তা করেন না। এটাই গীতার শিক্ষা—নিঃস্বার্থভাবে কর্তব্য পালন।

৩. তুমি এবং তোমার চ্যালেঞ্জ
তুমি হয়তো ছাত্রজীবনে বারবার ব্যর্থ হয়েছ, কিন্তু তোমার সামনে একটা বড় স্বপ্ন আছে। গীতার আদর্শে নিজের স্বপ্নের প্রতি একাগ্র থাকো এবং এগিয়ে যাও।

গীতার আরও কিছু উজ্জ্বল শিক্ষার কথা

১. “যোগঃ কর্মসু কৌশলম্”
তোমার কাজই তোমার যোগ। কাজের প্রতি নিষ্ঠা এবং দক্ষতাই জীবনের সফলতার মূলমন্ত্র।

২. “দ্বন্দ্বাতীতঃ স্যৎ সদাসুখি”
দ্বন্দ্বকে জয় করো। সুখ-দুঃখের উর্ধ্বে উঠতে শেখো।

৩. “ত্রৈগুণ্যবিষয়া বেদাঃ”
তোমার মানসিক স্থিতি বজায় রাখো। সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ—এই তিন গুণের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাও।

শেষ কথা: তুমি কি প্রস্তুত?

তোমার জীবনের রণক্ষেত্র এখনই শুরু হয়েছে। গীতার শ্লোকগুলো যদি হৃদয় দিয়ে বোঝো, জীবনের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে। অর্জুন যেমন কৃষ্ণের উপদেশে তার বিভ্রান্তি দূর করে যুদ্ধের ময়দানে নামল, তুমিও তেমনি গীতার জ্ঞান নিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে পারবে।

তাহলে তুমি কি প্রস্তুত? গীতার কোন শিক্ষাটি তোমার জীবনে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে বলে মনে হয়? “তোমার জীবন কি গীতার আলোয় বদলে যেতে পারে?”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top